বিদ্যাপতি কোন ভাষায় পদ রচনা করেন?

বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কবি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন। ব্রজবুলি হল মৈথিলি ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে গঠিত একটি কৃত্রিম সাহিত্যিক ভাষা। বিদ্যাপতির পদগুলিতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বর্ণিত হয়েছে। তার পদগুলি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিদ্যাপতির পদগুলির ভাষা অত্যন্ত সুন্দর ও মাধুর্যময়। তিনি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার ভাষা, ভাব, শব্দ ছন্দ ও অলঙ্কারের খনি থেকে রত্নরাজি আহরণ করে রাধার প্রেম বর্ণনা করেছেন।

ছন্দ অলঙ্কারে, শব্দবিন্যাসে ও বাগবৈদগ্ধে বিদ্যাপতির পদ ‘হীরক খণ্ডের মতো আলোক বিচ্ছুরণে সহস্রমুখী’, আবার ‘জীবনের আলো ও আঁধার, বিপুল পুলক ও অশান্ত বেদনা, রূপোল্লাস ও ভাবোন্মাদনা, মিলন ও বিরহ, মাথুর ও ভাব সম্মেলনে’ তার পদ আজো অতুলনীয়।

বিদ্যাপতির পদগুলি বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য সম্পদ। তার পদগুলি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

বজ্রবলি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় কাব্য ভাষা বা উপভাষা। বজ্রবণি মূলত এক ধরনের কৃত্রিম মিশ্রভাষা।

মেথিলি ও বাংলার মিশ্রিত রূপ হল বজ্রবলি ভাষা। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে মিথিলার কবি বিদ্যাপতি  এর উদ্ভাবন করেন।

এ ভাষা কখনো মুখের ভাষা ছিল না। সাহিত্যকর্ম ব্যতীত  অন্যএ এর ব্যবহার ও নেই।

জ্ঞানদাস বলরাম দাস। জগদা নন্দন, রায়শেখর  প্রমুখ্য কবিগনের রচিত বজ্রবলি পদ রয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভানুসিংহের পদাবলী রচনা করেছেন বজ্রবলি ভাষায়। চৈতন্যদের স্বয়ং বিদ্যাপতির পদ মুগ্ধ হয়ে শুনতেন ।

বিদ্যাপতি ১৩৮০ আনুমানিক সালে দ্বারভাঙ্গা জেলার সিতাময়ী মোহকুমার   বিসফী গ্রামের এক ব্রাক্ষণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার  কৌলিক  উপাধি ঠক্কর বা ঠাকুর।

বৈষক পদাবলীর আদি রচয়িতা পদ্মা সংগীত ধারার প্রবর্তক এবং প্রথম  অবাঙালি কবি। পিতা গণপতি ঠাকুর।

বর্তমান উত্তর হিসাবে চিরহিত জেলা ও দক্ষিণ নেপালের জনকপুর মিলে ঘরে উঠেছিল প্রাচীন ভারতীয় রাজ্য বিদেহ। আর সেই বিদেহ রাজ্যের রাজধানী মিথিলা।

এই মিথিলার পঞ্চদশ শতকের কবি বিদ্যাপতি ঠাকুর। তারা বংশ পরম্পরায় ছিলেন মিথিলার উচ্চ রাজকর্মচারী।

মিথিলার রাজা কীর্তি সিংহ তাকে স্বভাব পন্ডিত নিযুক্ত করেন। তৎকালে মিথিলা ছিল শিল্প-সংস্কৃতির  কেন্দ্র । বাংলার  ছেলেরা বিদ্যারজনের জন্য মিথিলা যেত।

আর বুক ভরে নিয়ে আসত বিদ্যাপতির কবিতা । এভাবে তিনি বাংলায় এক পঙ্গুক্তি না লিখেও বাংলার কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

 তিনি মিথিলার কোকিল অভিনয় জয়দেব পদাবলীর কবি নামেও খ্যাত । রাজা শিব সিংহ তাকে কবি কণ্ঠহার উপাধিতে ভূষিত করেন।

তার কবি খ্যাতি মূলত ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রাধা কুঞ্জের প্রণয়নমূলক পদ  পদাবলী এর জন্য ।

তবে তিনি মেথিলি আবহটঠ ও সংস্কৃত ভাষায়ও পদ রচনা করেন।

বিদ্যাপতি পদাবলীর শ্রেণীবিভাগ ক রাধাকৃঞ্জ বিষয়ক খহর গৌরী ও কালী বিষয়ক গ-গঙ্গা বিষয়ক ঘ প্রহেলিকা জাতীয় এবং ঙ দেবতা সম্পর্ক বর্জিত বিভিন্ন পদ।

বিদ্যাপতির অন্যান্য গ্রন্থ লিখোনাবলি  পত্র লেখার রীতি কীর্তিলতা  ইতিহাস কীর্তিপতাকা  অবহটঠ ভাষায় রচিত, পুরুষ পরীক্ষা নীতি শিক্ষা শিব সিংহের আদেশে রচিত।

ও রানী বিশ্বাস দেবীর আদেশে লিখিত শৈভসর্বস্বহার স্মৃতিমূলক  ও গঙ্গাকাব্যবলী (তীর্থস্থান)

 

১। স্মৃতি কথামূলক  দূর্গাভক্তিতরঙ্গিনী , বিভাগ সার।

২। তার বিখ্যাত পঙক্তিঃ

এ সখি হারামি দুখের নাহি ওর।

       এ ভরা বাদর মাহ  ভাদর

            শূন্য মন্দির মোর।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *