মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগৎে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালের ১৯ মে (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ) বিহারের সাঁওতাল পরগনা,বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজং এ। জন্মপত্রিকায় তার নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। তার পিতার দেওয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক। তার পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯২৮ সালে। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় বিচিত্রা পত্রিকায়। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল:
- পদ্মা নদীর মাঝি
- দিবারাত্রির কাব্য
- পুতুলনাচের ইতিকথা
- শহরতলি
- চতুষ্কোণ
- শহরবাসের ইতিকথা
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগুলিও বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলি হল:
- আজ কাল পরশুর গল্প
- অতসী মামী
- প্রাগৈতিহাসিক
- সমুদ্রের স্বাদ
- হারানের নাতজামাই
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মে মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়। তিনি ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।