চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (CU) বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি সর্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি বাংলাদেশের তৃতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়।
CU-তে ৫৪ টি বিভাগের অধীনে ৯ টি অনুষদ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩৮,০০০ শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ জন শিক্ষক রয়েছে।
CU-এর ক্যাম্পাসটি চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। ক্যাম্পাসটি প্রায় 2,000 একর জমির উপর বিস্তৃত এবং এতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য আবাসনের পাশাপাশি একাডেমিক ভবন, হল এবং খেলার মাঠ রয়েছে।
CU বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত। এটি বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। CU-এর শিক্ষকরা তাদের গবেষণার জন্যও খ্যাতিমান।
CU-এর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন:
- শেখ হাসিনা – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
- মোঃ আব্দুল হামিদ – বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
- মোঃ কামাল হোসেন – বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- মুহম্মদ ইউনুস – নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ
CU-তে ভর্তির জন্য, শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (HSC) উত্তীর্ণ হতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়াটি মেধা তালিকার উপর ভিত্তি করে।
CU-এর প্রোগ্রামগুলি দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন छात्रবৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
আপনি যদি বাংলাদেশের একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে আগ্রহী হন, তাহলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।
অনুষদসমূহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (CU) ৯ টি অনুষদ রয়েছে:
- কলা অনুষদ
- বিজ্ঞান অনুষদ
- বাণিজ্য অনুষদ
- আইন অনুষদ
- সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ
- প্রকৌশল অনুষদ
- চিকিৎসা অনুষদ
- কৃষি অনুষদ
- শিক্ষা অনুষদ
প্রতিটি অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলি বিভিন্ন স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রোগ্রাম অফার করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার ১৭৫৩.৮৮ একর পাহাড়ি ভূমিতে অবস্থিত।
ক্যাম্পাসে যাওয়ার দিকনির্দেশনা:
- ঢাকা থেকে:
- বাস: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বাস সার্ভিস রয়েছে। বাস যাত্রা প্রায় ৮-১০ ঘন্টা সময় নেয়। চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর, হাটহাজারী উপজেলার উদ্দেশ্যে রিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করতে পারেন।
- ট্রেন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। ট্রেন যাত্রা প্রায় ৭-৮ ঘন্টা সময় নেয়। চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর, হাটহাজারী উপজেলার উদ্দেশ্যে রিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করতে পারেন।
- চট্টগ্রাম শহর থেকে:
- বাস: চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে হাটহাজারী উপজেলার উদ্দেশ্যে বাস সার্ভিস রয়েছে। বাস যাত্রা প্রায় ১-২ ঘন্টা সময় নেয়।
- রিকশা/সিএনজি: চট্টগ্রাম শহর থেকে হাটহাজারী উপজেলার উদ্দেশ্যে রিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করতে পারেন। যাত্রা প্রায় 1.5-2 ঘন্টা সময় নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট: https://www.cu.ac.bd/
Google Maps: [ভুল URL সরানো হয়েছে]
আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার কাজে আসবে।
আপনার কি আরও কোন প্রশ্ন আছে?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস:
প্রতিষ্ঠা পূর্ববর্তী সময়:
- ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রামে উচ্চশিক্ষার জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার (১৯২১) পর চট্টগ্রামের শিক্ষিত ব্যক্তিরা চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানাতে থাকেন।
- ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি আরও তীব্র হয়।
- ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন।
- কমিটি চট্টগ্রাম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সুপারিশ করে।
প্রতিষ্ঠা:
- ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
- ১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
- ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
- প্রথমে চারটি বিভাগ (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস এবং অর্থনীতি) নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
- প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান মল্লিক।
বিকাশ ও প্রসার:
- স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত বিকশিত হয়।
- বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ এবং ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
- প্রায় ৩৮,০০০ শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত।
- বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে।
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের গবেষণার জন্যও খ্যাতিমান।
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র:
- শেখ হাসিনা – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
- মোঃ আব্দুল হামিদ – বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
- মোঃ কামাল হোসেন – বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- মুহম্মদ ইউনুস – নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ
স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা:
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে:
- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সংগঠিত হতে থাকে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
- ৮ মার্চ ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
- ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্পাস দখল করতে এলে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- ১০ দিন ধরে প্রতিরোধ যুদ্ধের পর সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
- এরপর দীর্ঘ ৯ মাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে দখল করে রাখে হানাদার বাহিনী।
- মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থী এবং ৩ জন কর্মকর্তা শহীদ হন।
- প্রায় ২০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
- মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষাঙ্গন বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও মনোরম শিক্ষাঙ্গন। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরে ফতেপুর ইউনিয়নে ২,৩০০ একর জায়গা জুড়ে এ শিক্ষাঙ্গন অবস্থিত।
শিক্ষাঙ্গনের বৈশিষ্ট্য:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: পাহাড়, বন, ঝর্ণা, হ্রদ, খাল, খেলার মাঠ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদির অপূর্ব মিশ্রণে গড়ে উঠেছে এই শিক্ষাঙ্গন।
বিভিন্ন ভবন: শিক্ষক-কর্মচারীর আবাসন, শিক্ষার্থী হল, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, অফিস, অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ, ব্যাংক, ডাকঘর, মেডিকেল সেন্টার ইত্যাদি।
শিক্ষাঙ্গনের আকর্ষণীয় স্থান:
- কেন্দ্রীয় মসজিদ:
- শহীদ মিনার:
- বোটানিক্যাল গার্ডেন:
- কলা ভবন:
- বিজ্ঞান ভবন:
- সেন্ট্রাল লাইব্রেরি:
- জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ:
- টিবি কেন্দ্র:
- শহীদ স্মৃতিসৌধ:
শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ:
- শান্ত, মনোরম ও পরিবেশবান্ধব পরিবেশ।
- শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
- বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
- খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বেশ কিছু স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১) শহীদ মিনার:
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১৯৬৩ সালে নির্মিত হয় এই স্মৃতিস্তম্ভ।
২) স্বাধীনতা স্মারক:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৯ সালে নির্মিত হয় এই স্মৃতিস্তম্ভ।
৩) বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় এই স্মৃতিস্তম্ভ।
৪) জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকলের স্মরণে ২০০৯ সালে নির্মিত হয় এই স্মৃতিসৌধ।
৫) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুখ্য স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ২০১৩ সালে স্থাপন করা হয় এই মূর্তি।
৬) মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাকে তুলে ধরে ২০২১ সালে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্য।
৭) জ্ঞানের স্তম্ভ:
জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় এই ভাস্কর্য।
৮) ‘৭১-এর স্মৃতি:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে নির্মিত এই ভাস্কর্য।
৯) অসমাপ্ত কবিতা:
বাংলাদেশের অসমাপ্ত স্বপ্নগুলোকে তুলে ধরে নির্মিত এই ভাস্কর্য।
১০) মাতৃত্ব:
মায়ের মহত্ত্বকে তুলে ধরে নির্মিত