ণত্ব ও ষত্ব বিধান কাকে বলে?

ণ-ত্ব বিধান

বাংলা ভাষায় দন্ত্য ন ও মূর্ধন্য ণ-এর উচ্চারণগত কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় এর পার্থক্য ছিল। আমরা জানি, বাংলা ভাষায় অবিকৃত বহু সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা হয়।
এ সংস্কৃত শব্দগুলোতে সংস্কৃতের মত দন্ত ন ও মূর্ধন্য-ণ ব্যবহার করা হয়। তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে যে নিয়মকে অনুসরণ করে মূর্ধন্য ণ-এর ব্যবহার হয় তাকেই ণ-ত্ব বিধান বলে। তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ ছাড়া বাংলাভাষার শব্দসম্ভারের অন্য কোন শব্দে মূর্ধন্য ণ লেখার নিয়ম নেই।

ণ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম হল:

১. ট বর্গীয় ধ্বনির আগের দন্ত্য ন সব সময় মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন: ঘণ্টা, লুণ্ঠন, কাণ্ড ইত্যাদি।

২. ঋ, র, ষ এর পরে মূর্ধন্য ণ-হয়। যেমন: ঋণ, তৃণ, বর্ণ, ভাষণ ইত্যাদি।

৩. ঋ, র, ষ এর পরে স্বরধ্বনি, য, ব, হ এবং ক ও প বর্গীয় ধ্বনি থাকলে পরবর্তী দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন: হরিণ (র. এর পরে ই তারপরে ণ), অর্পণ (র+প+অ+ণ), লক্ষণ (ক্+ষ্+অ+ণ), কৃপণ (ঋ কারের পরে প্, পরে ণ) ইত্যাদি।

৪. সমাসবদ্ধ শব্দে দুইপদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকলে ণ-ত্ব বিধান খাটে না। যেমন: ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি ইত্যাদি।

৫. ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।

ণ-ত্ব বিধানের কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন:

    • ঋ-কারের পরে ক-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: কৃষ্ণ।
    • ঋ-কারের পরে য-বর্ণ থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: ঋষি।
    • ঋ-কারের পরে স্বরধ্বনি থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: ঈর্ষা।

ষ-ত্ব বিধান

তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে যে নিয়মকে অনুসরণ করে দন্ত্য স-এর মূর্ধন্য ষ হয় তাকেই ষ-ত্ব বিধান বলে। ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম হল:

১. ঋ-কারের পরে ষ হয়। যেমন: কৃষক, তৃষ্ণা ইত্যাদি।

২. ক-বর্গীয় ধ্বনির পরে অ, ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ এবং ক ও র-এসব বর্ণের মধ্যবর্তী দন্ত ‘স’ মূধর্ণ্য ‘ষ’ হয়। যেমন: মুমূর্ষ, শীচরণেষু ইত্যাদি।

৩. ট-বর্গের আগে সর্বদা ষ হয়। যেমন: টঙ্ক, ঠোঁট, ঢোল ইত্যাদি।

৪. সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন: ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, অকস্মাৎ ইত্যাদি।

৫. খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন: টেক্স, পুলিশ, জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা ইত্যাদি।

কোথায় কোথায় ণ-ত্ব বিধান নিষেধ বা খাটে না

ণ-ত্ব বিধান নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নিষেধ বা খাটে না:

  • ত-বর্গীয় দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।
  • সমাসযুক্ত শব্দে দুইপদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকলে ণ-ত্ব বিধান খাটে না। যেমন: ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি ইত্যাদি।
  • বিদেশী শব্দে ণ-ত্ব বিধান খাটে না। যেমন: কোরআন, জার্মান, জবান, নিশান, ফরমান, রিপন ইত্যাদি।
  • পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলে পরপদে ণ-ত্ব বিধান খাটে না। যেমন: মৃগনাভি, দুর্নাম, ত্রিনেত্র, মৃন্ময়।

এছাড়াও, ণ-ত্ব বিধানের কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন:

  • ঋ-কারের পরে ক-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: কৃষ্ণ।
  • ঋ-কারের পরে য-বর্ণ থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: ঋষি।
  • ঋ-কারের পরে স্বরধ্বনি থাকলে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: ঈর্ষা।

এই নিয়মগুলি মনে রাখার জন্য কিছু ছড়া রয়েছে। যেমন:

  • “ঋ, র, ষ-এর পরে, ণ হয় অকস্মাৎ ত-বর্গীয় ণ হয় না, সাবধানে শোনাও গান”
  • “সমাসে ণ হয় না, ঋষী-কৃষ্ণ-শিষ্য-শ্রী বিদেশী শব্দে ণ হয় না, কোরআন-জার্মান-জিনিস”

আশা করি এই তথ্যগুলি আপনার কাজে লাগবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *