জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি

জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম। বইটি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় এবং ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়।

এটি একটি ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে লেখা, যাতে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাহানারা ইমামের নিজের জীবনের পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশের অবস্থার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।

বইটিতে জাহানারা ইমাম তার স্বামী শরীফ ইমাম এবং ছেলে শফি ইমাম রুমীকে নিয়ে লেখেন। রুমী একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন যিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আর কখনও ফিরে আসেননি।

শরীফ ইমাম একজন পুরকৌশলী ছিলেন যিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যুদ্ধের সময় তার অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে মারা যান।

বইটিতে জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। তিনি শহরের গুলিবিনিময়, বোমা হামলা এবং গণহত্যা সম্পর্কে লেখেন। তিনি গেরিলা যোদ্ধাদের সাহস ও বীরত্বের কথাও লেখেন।

“একাত্তরের দিনগুলি” একটি শক্তিশালী ও হৃদয়স্পর্শী বই। এটি মুক্তিযুদ্ধের ট্র্যাজেডি ও গৌরবময় ইতিহাসের এক অসামান্য দলিল।

জাহানারা ইমাম

বইটি মুক্তিযুদ্ধের পরপরই প্রকাশিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসাবে বিবেচিত হয়। বইটি ২০০৭ সালে জাতীয় অধ্যাপক উপাধিতে ভূষিত হয়।

বইটি বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পঠিত হয়। এটি বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে, তবে এটি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, জাপানি ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বইটি বিশ্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ট্র্যাজেডি সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।

১৩ই এপ্রিলঃ মঙ্গলবার ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় আট শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে। এ ঘটনাটি চারঘাট গণহত্যা নামে পরিচিত।

এছাড়াও এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার মিরপুরে সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এ অভিযানে দুই পুলিশ অফিসার নিহত হন এবং সেনাবাহিনী সারদা পুলিশ একাডেমি দখল করে নেয়।

এছাড়াও এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

চারঘাট গণহত্যা

১৩ই এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালায়। তারা গ্রামবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।

এই গণহত্যার শিকারদের মধ্যে ছিল নারী, শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি রোগীও। পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে, গুলি করে মাথা ফাটিয়ে, গলা কেটে, পুড়িয়ে হত্যা করে।

এই গণহত্যার ফলে চারঘাট উপজেলার শত শত পরিবারের স্বজন হারায়। এই গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি ভয়াবহ অধ্যায়।

সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান

১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এ অভিযানে দুই পুলিশ অফিসার নিহত হন এবং সেনাবাহিনী সারদা পুলিশ একাডেমি দখল করে নেয়।

সারদা পুলিশ একাডেমি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ একাডেমি থেকে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই অভিযানে সারদা পুলিশ একাডেমি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এই অভিযানের ফলে সারদা পুলিশ একাডেমিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

অন্যান্য গণহত্যা ও লুটপাট

১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

এই দিন ঢাকার মিরপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এই গণহত্যা ও লুটপাটের ফলে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।

১৩ই এপ্রিলের এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনাগুলোর ফলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে আরও বেশি উজ্জীবিত হয় এবং তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *