ঘাসফড়িং সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ঘাসফড়িং হল একটি বড় পোকা যা তৃণভোজী। এগুলি সারা বিশ্বে পাওয়া যায় এবং প্রায় 10,000 টি বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে।

ঘাসফড়িংগুলির একটি দীর্ঘ, সরু দেহ থাকে যা তিনটি অংশে বিভক্ত: মাথা, বক্ষ এবং উদর। তাদের একটি শক্তিশালী মাথা রয়েছে যাতে একটি শক্ত চোয়াল থাকে যা তারা খাদ্য চিবানোর জন্য ব্যবহার করে। তাদের দুটি জোড়া চোখ রয়েছে, একটি জোড়া সামনে এবং একটি জোড়া মাথার উপরে। তাদের তিন জোড়া পা রয়েছে, যার দুটি জোড়া লাফানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

ঘাসফড়িংগুলি বিভিন্ন রঙ এবং আকারে আসে। তারা সবুজ, বাদামী, হলুদ, সাদা এবং কালো হতে পারে। তারা 1 ইঞ্চি থেকে 6 ইঞ্চি লম্বা হতে পারে।

ঘাসফড়িংগুলি তৃণভোজী এবং তারা বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ খায়। তারা সবুজ, পাতা, ফুল এবং বীজ খায়। তারা কখনও কখনও ফসলের ক্ষতি করতে পারে।

ঘাসফড়িংগুলি প্রজননকারী পোকামাকড়। মহিলা ঘাসফড়িং একবারে 100 টি ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলি মাটিতে পাওয়া যায় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফড়িংয়ের জন্ম হয়। বাচ্চা ফড়িংগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়।

ঘাসফড়িংগুলির অনেক প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাখি, ব্যাঙ, এবং বানর।

এখানে ঘাসফড়িং সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত তথ্য রয়েছে:

  • ঘাসফড়িংগুলি তাদের লাফানোর ক্ষমতার জন্য পরিচিত। তারা তাদের শক্তিশালী পেশী ব্যবহার করে 10 গুণ তাদের দৈর্ঘ্যের দূরত্বে লাফ দিতে পারে।
  • ঘাসফড়িংগুলি শব্দ তৈরি করতে পারে। তারা তাদের ডানা ঝাপটায় বা তাদের পা টিপ দিয়ে শব্দ তৈরি করে।
  • ঘাসফড়িংগুলির কিছু প্রজাতি পরিযায়ী। তারা খাবার এবং আবাসস্থল খুঁজতে বিশাল দলে ভ্রমণ করে।

ঘাসফড়িংগুলি প্রাকৃতিক বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা খাদ্য শৃঙ্খলের একটি অংশ এবং তারা মাটিতে পুষ্টির প্রবাহে অবদান রাখে।

(বাসস্থান Habitat)

ঘাসফড়িং যেহেতু ঘাস, পাতা, শস্য ও শস্যের কচিপাতা আহার করে সে কারণে এমন ধরনের নিচু  বসতি এদের পছন্দ ।

মূলত সব ধরনের বসতিতেই (তৃণভূমি বারিবন, চারণভূমি মাঠ মরুভূমি  জলাভূমি প্রবৃত্তি ) বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসফড়িং দেখা যায়।

স্বাদুপানির ও ম্যানগ্রোভ জলাশয়ে যেহেতু পানির উঠানামা বেশি হয় এবং ডিম পাড়া জায়গা প্লাবিত হয়ে যায় সে কারণে এসব বসতিতে ঘাসফড়িং কম বাস করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘাসফড়িং বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী হয়, দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যেতে পারে।

  • Phylum: Arthropoda
  • Class: Insecta
  • Subclass: Pterygota
  • Order: Orthoptera
  • Family: Acrididae
  • Genus: Poekilocerus
  • Species: Poekilocerus pictus

খাদ্য (Food)ঘাসফড়িং উদ্ভিদভোজী প্রাণী । ডিম থেকে ফোটার পরপরই নিম্ফ অবস্থায় ঘাসফড়িং চার পাশের যে কোনো ছোট ছোট সহজপাচ্য গাছ ঘাস বা নতুন কোমল শাখা প্রশাখা খেতে শুরু করে।

দু, একবার খোলস মোচনের পর একটু বড় হলে শক্ত উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে ।  তরুণ ঘাসফড়িং পূর্ণাঙ্গদের মতোই নির্দিষ্ট উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে।

তখন খাদ্য তালিকায় ঘাস ,পাতা ও শস্য প্রধান খাবার হিসেবে উঠে আসে । বেশির ভাগ ঘাসফড়িং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে আহার  সংগ্রহ করে  দু একটি প্রজাতি সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে।

 বাহিক অঙ্গসংস্থান (External Morphology)

ঘাসফড়িং এর দেহ শুরু  লম্বাটে বেলনাকার ( cylindrical ) এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম । পূর্ণাঙ্গ প্রাণী লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।দেহের র অনেকটা হলদে  এবং সবুজ  (yellowish green) ধরনের অথবা মাদানী রঙের মাঝে নানা ধরনের কোটা বা ডোরাকাটা হতে পারে ।

মিশ্রিত এ রঙ  তাদের মিশ্রিত এ রঙ  তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলা এমনকি শত্রুর  হাত থেকে  ও রক্ষা করতে সাহায্য করে । এছাড়াও কিছু ঘাসফড়িং আছে উজ্জ্বল নীল হলুদ রঙের ।

ঘাসফড়িং- এর কাইটিনযুক্ত কিউটিকল ( cuticle )  এ আবৃত্ত । বহিঃকঙ্কাল হাইপোডাগার্মিস  নিংসৃত পদার্থে সৃষ্টি এবং প্রতিটি দেহখণ্ডকে স্কেরাইট (sclcrite) নামক কঠিন প্লেটের  মতো গঠন সৃষ্টি করে।

স্কেরাইটগুলোর  সংযোগস্থল  সুচার (suture) নামে পাতলা নরম দিল্লিতে আবৃত । সুচারের উপস্থিতির কারণে দেহখন্ডক ও উপাঙ্গগুলো সহজেই নড়াচড়া করতে পারে ।

কিউটিকলের ভেতরে ও নিচে নানা ধরনের রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকায় ঘাসফড়িং এর বর্ণময়তা দেখা যায় ।

(ক)  মস্তক (Head)-চক্ষু অ্যান্টেনা এবং মুখোপাঙ্গ বহন করে ।

(খ)  বক্ষ (Thorax) -তিনজোড়া  পা ও দুইজোড়া ডানার সংযোগ  সাধন করে এবং বহন করে ।

(গ)  উদয় (Abdomen)-শ্বাসরন্ধ  বা স্পাইরাকল (Spiracle) এবং জনন অঙ্গসমূহ (genitaliae) ধারণ  করে ।

(ক) মস্তক (Head):বাইরে থেকে অখন্ডকিত (একক) মনে হলেও মূলত ৬টি ভ্রুণীয় খন্ডকের (embryonic segments) সমন্বয়ে এটি গঠিত । মস্তক  দেখতে নাশপাতি আকৃতির এবং হাইপোগণ্যাথাস ( hypognathous) ধরনের অর্থাৎ মুখছিদ্র নিম্নমুখী হয়ে মোস্তাকের নিচে অবস্থান করে ।

(খ) বক্ষ (Thorax): মস্তকের পেছনে মাংসল বক্ষ একটি খাটো শুরু ও নমনীয়  গ্রীবার সাহায্যে যুক্ত । ঘাসফড়িং এর বক্ষাঞ্চল তিনটি অংশে বিভক্ত; অগ্নবক্ষ (prothorax)  মধ্যবক্ষ (mesothorax) এবং পশ্চাৎবক্ষ (metathorax) । প্রত্যেক অংশের পৃষ্ঠদেশ টার্গাম আত্মীয়দের স্টানাম পার্শ্বদেশ  প্লিউরন- এ গঠিত ।

এগুলো পাতলা কিউটিকলের পর্দা দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত । অগ্রবক্ষের  টার্গাম অংশটি বেশ বড় ও চওড়া এবং পেছনে ও পাশে প্রসারিত । এর নাম প্রোনোটা (pronotum)  বক্ষঞ্চল রয়েছে শ্বাসরুদ্ধ পা ও ডানা । 

গ) উদয় (Abdomen):ঘাসফড়িং এর উদল বেশ লম্বা সরু এবং ১১ টি  ভন্ডকে বিভক্ত । প্রত্যেক খন্ডকের পৃষ্ঠদেশে তার টার্গাম  এবং অক্সীয়দেশে স্টার্নাম থাকে, কোন  প্লিউরন থাকে না ।

প্রথম উদরীয় কণ্ডটি অসম্পূর্ণ; কারণ স্টার্নাম পশ্চাৎবক্ষের সাথে যুক্ত থাকে । এতে শুধু টারগাম থাকে । এর পাশে থাকে শ্রবণ থলিতে ঘিরে রাখা টিমপ্যানিকি ঝিল্লি (tympanic membrane) ।

প্রথম দিকে থেকে অষ্টম দেহখন্ডক পর্যন্ত প্রতিটি খণ্ডকের  পার্শ্বদেশে একজোড়া করে মোট  আট জোড়া আটজোড়া শ্বাসছিদ্র থাকে । উদরের  পশ্চাৎভাগ সঙ্গমের জন্য অথবা ডিম পাড়ার জন্য নানাভাবে রূপান্তরিত হয় ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *