ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য

জমি কার নামে আছে কিভাবে দেখবো?

আপনি যদি বাংলাদেশে থাকেন এবং আপনার কাছে জমির দাগ নম্বর থাকে, তাহলে আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জমির মালিকের নাম বের করতে পারেন।

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, “নামজারি খতিয়ান” অপশনে ক্লিক করুন। এরপর, দাগ নম্বর এবং মৌজা নম্বর প্রদান করুন। আপনি যদি আপনার জেলার নামও প্রদান করেন, তাহলে খোঁজা আরও সহজ হবে।

আপনি যদি আপনার জেলার ভূমি অফিসে গিয়েও জমির মালিকের নাম বের করতে পারেন। ভূমি অফিসে গিয়ে, একজন কর্মকর্তাকে বলুন যে আপনি জমির মালিকের নাম জানতে চান। কর্মকর্তা আপনাকে দাগ নম্বর জিজ্ঞাসা করবেন। দাগ নম্বর প্রদান করার পর, কর্মকর্তা আপনাকে জমির মালিকের নাম জানাবেন।

আপনি যদি আপনার কাছে জমির দাগ নম্বর না থাকে, তাহলে আপনি জমির মালিকের নাম বের করতে পারবেন না। তবে, আপনি যদি জমির অবস্থান জানেন, তাহলে আপনি একজন জমির কেরানি বা একজন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করে জমির দাগ নম্বর জানতে পারেন। দাগ নম্বর জানার পর, আপনি উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে জমির মালিকের নাম বের করতে পারেন।

আপনি যে ছবিটি পাঠিয়েছেন তাতে জমির দাগ নম্বর লেখা নেই। তাই, আমি আপনাকে সরাসরি জমির মালিকের নাম বলতে পারছি না। তবে, আপনি উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে জমির মালিকের নাম বের করতে পারেন।

নামজারী কি?

নামজারি বা মিউটেশন বলতে বোঝায় জমির মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত সরকারি রেকর্ড হালনাগাদ করা। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় জমি/ভূমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।

নামজারি করার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:

  • জমির দাগ নম্বর এবং মৌজা নম্বর
  • জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল (ক্রয়-বিক্রয়, দান, উত্তরাধিকার ইত্যাদি)
  • দলিলের অনুলিপি
  • জমির মালিকের পরিচয়পত্র
  • জমির শ্রেণি ও পরিমাণ
  • ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ

নামজারি করা জরুরি কারণ এটি জমির মালিকানা নিয়ে কোন জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। নামজারি না থাকলে জমি বিক্রি, বন্ধক, বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যায় না।

নামজারি করার জন্য আপনি আপনার জেলার ভূমি অফিসে আবেদন করতে পারেন। অনলাইনেও নামজারি আবেদন করা যায়।

বাংলাদেশে কত প্রকার ভূমি আছে

বাংলাদেশের ভূমির ধরনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

  • সম্পত্তিগত ভিত্তিতে: এই ভিত্তিতে ভূমিকে ব্যক্তিগত, সরকারি, এবং ধর্মীয় সম্পত্তিতে ভাগ করা যায়।
  • উৎপত্তিগত ভিত্তিতে: এই ভিত্তিতে ভূমিকে প্রাকৃতিক, কৃত্রিম, এবং উদ্ভিজ্জ ভূমিতে ভাগ করা যায়।
  • বরাদ্দের ভিত্তিতে: এই ভিত্তিতে ভূমিকে চাষের জমি, বসতভিটা, এবং বনভূমিতে ভাগ করা যায়।

সম্পত্তিগত ভিত্তিতে ভূমির শ্রেণি:

  • ব্যক্তিগত সম্পত্তি: ব্যক্তিগত সম্পত্তি হল এমন ভূমি যা কোন ব্যক্তি বা পরিবারের মালিকানাধীন। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বসতভিটা, চাষের জমি, বাণিজ্যিক জমি, শিল্প-কারখানা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • সরকারি সম্পত্তি: সরকারি সম্পত্তি হল এমন ভূমি যা বাংলাদেশের সরকারের মালিকানাধীন। সরকারি সম্পত্তিতে রাস্তাঘাট, পার্ক, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বনভূমি, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • ধর্মীয় সম্পত্তি: ধর্মীয় সম্পত্তি হল এমন ভূমি যা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। ধর্মীয় সম্পত্তিতে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, ইত্যাদির জমি অন্তর্ভুক্ত।

উৎপত্তিগত ভিত্তিতে ভূমির শ্রেণি:

  • প্রাকৃতিক ভূমি: প্রাকৃতিক ভূমি হল এমন ভূমি যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক ভূমিতে সমভূমি, পাহাড়, মালভূমি, উপকূলীয় ভূমি, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • কৃত্রিম ভূমি: কৃত্রিম ভূমি হল এমন ভূমি যা মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। কৃত্রিম ভূমিতে কৃষি জমি, নগর, গ্রাম, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • উদ্ভিজ্জ ভূমি: উদ্ভিজ্জ ভূমি হল এমন ভূমি যা উদ্ভিদের দ্বারা আবৃত। উদ্ভিজ্জ ভূমিতে বনভূমি, চাষের জমি, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

বরাদ্দের ভিত্তিতে ভূমির শ্রেণি:

  • চাষের জমি: চাষের জমি হল এমন ভূমি যা চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বসতভিটা: বসতভিটা হল এমন ভূমি যা বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বনভূমি: বনভূমি হল এমন ভূমি যা গাছপালা দ্বারা আবৃত থাকে।

উপরে উল্লেখিত শ্রেণিবিভাগ ছাড়াও ভূমিকে অন্যান্য ভিত্তিতেও ভাগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভূমিকে উর্বরতা, জলপ্রাপ্যতা, এবং ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারেও ভাগ করা যায়।

তাই, বাংলাদেশের ভূমির ধরনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হলেও, প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে একে আরও বিভক্ত করা যায়।

বাংলাদেশের অনুর্বর জমি কতটি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৭৫ শতাংশ জমি উর্বরতা বা পুষ্টি ঘাটতিতে ভুগছে। এর মধ্যে ১ কোটি ১১ লাখ হেক্টর জমিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, বোরন ও জিংক এর যেকোনোটির উপস্থিতি পর্যাপ্ত না থাকায় উৎপাদন ঘাটতি ও খাদ্যের গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।

অনুর্বর জমির পরিমাণের হিসাব বিভিন্নভাবে করা হয়। বিবিএসের হিসাবে, বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৭৫ শতাংশ জমি অনুর্বর। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) হিসাবে, বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি অনুর্বর।

অনুর্বর জমির পরিমাণের ক্ষেত্রে বিবিএসের হিসাব বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। কারণ, বিবিএসের হিসাবে জমির উর্বরতা বা পুষ্টি ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বারি শুধুমাত্র মাটির pH-এর ভিত্তিতে অনুর্বর জমির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশের অনুর্বর জমির প্রধান কারণ হল:

  • অতিরিক্ত চাষবাস: একই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে একই ফসল চাষ করলে মাটির উর্বরতা কমে যায়।
  • রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অপব্যবহার: রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অপব্যবহার মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
  • বনভূমি ধ্বংস: বনভূমি ধ্বংস হলে মাটির উর্বরতা কমে যায়।

অনুর্বর জমি কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • জমিতে ফসল বৈচিত্র্যকরণ: একই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে একই ফসল চাষ না করে ফসল বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব।
  • জৈব সার ব্যবহার: রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
  • বনভূমি সংরক্ষণ: বনভূমি সংরক্ষণ করলে মাটির উর্বরতা রক্ষা পায়।

এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অনুর্বর জমি কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ভূমি সংক্রান্ত সকল আইন

বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত সকল আইনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

  • ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন: এই আইনের মাধ্যমে সরকারের কোন জমি অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
  • ভূমি রেকর্ড ও জরিপ আইন: এই আইনের মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় বিধানাবলী প্রদান করা হয়েছে।
  • ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন: এই আইনের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানাবলী প্রদান করা হয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন

ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ হল বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারের কোন জমি অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

এই আইনের আওতায়, সরকার কোন জমি অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করতে চাইলে, প্রথমে সেই জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে, জমির মূল্য, জমির উৎপাদনক্ষমতা, এবং জমির অবস্থান বিবেচনা করা হয়।

ভূমি অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য হল:

  • জনস্বার্থে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
  • জননিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা।
  • কোন জমিকে সরকারের কাজে ব্যবহার করা।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ আইন

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ আইন, ২০০৪ হল বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইনের মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় বিধানাবলী প্রদান করা হয়েছে।

এই আইনের আওতায়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপের জন্য একটি জাতীয় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে। এই অধিদপ্তরের দায়িত্ব হল বাংলাদেশের সমস্ত ভূমি জরিপ করে রেকর্ড সংরক্ষণ করা।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপের উদ্দেশ্য হল:

  • ভূমির মালিকানা নির্ধারণ করা।
  • ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সহজ করা।
  • ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা।

ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন

ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯ হল বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইনের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানাবলী প্রদান করা হয়েছে।

এই আইনের আওতায়, ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জাতীয় ভূমি ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। এই কাউন্সিলের দায়িত্ব হল বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

ভূমি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল:

  • ভূমিকে একটি উৎপাদনশীল সম্পদে পরিণত করা।
  • ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা।
  • ভূমি ব্যবহারের ভারসাম্য রক্ষা করা।

উপরন্তু, বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আইনের মধ্যে রয়েছে:

  • ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৫০
  • অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১
  • বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৩
  • হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩

এই আইনগুলি ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিধানাবলী প্রদান করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *