বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ইতিহাস

বিএনসিসি এর মানে কি?

বিএনসিসি এর মানে হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (Bangladesh National Cadet Corps)। এটি একটি আধাসামরিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠন যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সারির বাহিনী হিসেবে কাজ করে। বিএনসিসির লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের যুবকদের মধ্যে নেতৃত্ব, দেশপ্রেম, এবং সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

বিএনসিসিতে তিনটি শাখা রয়েছে:

  • সেনা শাখা: এই শাখায় ক্যাডেটরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পায়।
  • নৌ শাখা: এই শাখায় ক্যাডেটরা নৌবাহিনীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পায়।
  • বিমান শাখা: এই শাখায় ক্যাডেটরা বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পায়।

বিএনসিসিতে যোগদানের জন্য একজন শিক্ষার্থীর বয়স ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং তার এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বিএনসিসির প্রশিক্ষণ সাধারণত দুই বছরের হয়।

বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। তারা দুর্যোগ মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে সহায়তা, এবং স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

বিএনসিসি বাংলাদেশের যুবকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। এটি যুবকদের মধ্যে নেতৃত্ব, দেশপ্রেম, এবং সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

BNCC কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদর দপ্তর ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত। এর ঠিকানা হলো:

৩২ ঈশা খান এভিনিউ, সেক্টর#৬, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০

বিএনসিসির সদর দপ্তরের অধীনে সারাদেশে ৫টি রেজিমেন্ট এবং ২টি উইং রয়েছে। রেজিমেন্টগুলো হলো:

  • রমনা রেজিমেন্ট, ঢাকা
  • কর্ণফুলী রেজিমেন্ট, চট্টগ্রাম
  • ময়নামতি রেজিমেন্ট, কুমিল্লা
  • মহাস্থান রেজিমেন্ট, রাজশাহী
  • সুন্দরবন রেজিমেন্ট, খুলনা

উইংগুলো হলো:

  • নৌ উইং, ঢাকা
  • বিমান উইং, ঢাকা

বিএনসিসির প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত।

বিএনসিসি কত সালে গঠিত হয়

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ১৯৭৯ সালের ২৩শে মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি আধা-সামরিক, স্বেচ্ছাসেবী সংরক্ষিত সামরিক বাহিনী। বিএনসিসির লক্ষ্য হল যুবকদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, দেশপ্রেম এবং সামরিক জ্ঞান গড়ে তোলা।

বিএনসিসির প্রতিষ্ঠার আগে, ১৯৪৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর (ইউওটিসি) নামে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে এটি পাকিস্তান ক্যাডেট কোর (পিসিসি) নামে পরিবর্তিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পিসিসির ক্যাডেটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭৯ সালে, বিএনসিসি গঠনের মাধ্যমে পিসিসি এবং জুনিয়র ক্যাডেট কোর (জেসিসি) একীভূত করা হয়। বিএনসিসি বর্তমানে বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় সংগঠন। এটি প্রতি বছর প্রায় ১০০,০০০ ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ দেয়।

BNCC তে ভর্তি হতে কি কি লাগে?

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) তে ভর্তি হতে হলে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:

  • বয়স: ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
  • শারীরিক যোগ্যতা: উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (ছেলে) এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (মেয়ে), ওজন দেহের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ভর্তি পরীক্ষার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশী নাগরিক

বিএনসিসি তে ভর্তি হতে হলে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:

  • আবেদনপত্র
  • জন্ম সনদ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদপত্র
  • ছবি (২ কপি)
  • প্রয়োজনীয় ফি

বিএনসিসি তে ভর্তি পরীক্ষা প্রতি বছর জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, এবং গাণিতিক যুক্তি থেকে প্রশ্ন আসে।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে ক্যাডেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে পূর্ণাঙ্গ ক্যাডেট হিসেবে নিশ্চিত করা হয়।

বিএনসিসি তে ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

BNCC-এর সুবিধা গুলো কী কী?

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি: বিএনসিসির প্রশিক্ষণ ক্যাডেটদের নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন: বিএনসিসির প্রশিক্ষণ ক্যাডেটদের সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে।
  • সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ: বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে।
  • সামরিক চাকরির সুযোগ: বিএনসিসির ক্যাডেটরা সামরিক চাকরিতে যোগদানের সুযোগ পায়।

বিএনসিসির সুবিধাগুলো নিম্নরূপভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে:

নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি: বিএনসিসির প্রশিক্ষণ ক্যাডেটদের নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্যাডেটরা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে। এতে তাদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন: বিএনসিসির প্রশিক্ষণ ক্যাডেটদের সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। ক্যাডেটরা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে সামরিক বিষয়ের উপর বিভিন্ন ক্লাস এবং অনুশীলন করে। এতে তাদের সামরিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ: বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। তারা দুর্যোগ মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে সহায়তা, এবং স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এতে তাদের সামাজিক ও মানবিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

সামরিক চাকরির সুযোগ: বিএনসিসির ক্যাডেটরা সামরিক চাকরিতে যোগদানের সুযোগ পায়। বিএনসিসির ক্যাডেটদের আইএসএসবি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। আইএসএসবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডেটরা সরাসরি সেনা, নৌ, বা বিমান বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার পদে যোগদান করতে পারে।

অবশেষে বলা যায় যে, বিএনসিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন যা বাংলাদেশের যুবকদের জন্য অনেক সুযোগ ও সুবিধা প্রদান করে

বিএনসিসি ভর্তি যোগ্যতা

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) তে ভর্তি হতে হলে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে:

  • বয়স: ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
  • শারীরিক যোগ্যতা: উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (ছেলে) এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (মেয়ে), ওজন দেহের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ভর্তি পরীক্ষার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশী নাগরিক

বিস্তারিতভাবে বলা যায়:

বয়স: আবেদনকারীর বয়স ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে। ১৭ বছর বয়সে আবেদন করা যাবে এবং ২২ বছর বয়সে পূর্নতা লাভের আগে প্রশিক্ষণ শেষ করতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: আবেদনকারীকে অবশ্যই এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

শারীরিক যোগ্যতা: আবেদনকারীর উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (ছেলে) এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (মেয়ে) হতে হবে। ওজন দেহের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আবেদনকারীকে ভর্তি পরীক্ষার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে আবেদনপত্র বাতিল করা হবে।

নাগরিকত্ব: আবেদনকারী অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।

বিএনসিসি তে ভর্তি হতে হলে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:

  • আবেদনপত্র
  • জন্ম সনদ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদপত্র
  • ছবি (২ কপি)
  • প্রয়োজনীয় ফি

বিএনসিসি তে ভর্তি পরীক্ষা প্রতি বছর জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, এবং গাণিতিক যুক্তি থেকে প্রশ্ন আসে।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে ক্যাডেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে পূর্ণাঙ্গ ক্যাডেট হিসেবে নিশ্চিত করা হয়।

বিএনসিসি তে ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *