বঙ্গবন্ধুর এর জীবনী ইতিহাস

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
১৯২৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ সালে তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৪৬ সালে বিএ পাস করেন। কলকাতায় পড়াশোনাকালীন তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত সংগ্রামপূর্ণ। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র, কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না।

তাই তিনি পড়াশোনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন তার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি রচনা করেছিল। তিনি ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকে এই সাফল্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ছিল ব্যাপক ও উদার। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং সকল মানুষের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। তিনি শিক্ষাকে একটি জাতির উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করতেন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নীতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল:

  • সকল মানুষের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ
  • শিক্ষার মান উন্নয়ন
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষার প্রসার
  • নারী শিক্ষার উন্নয়ন
  • বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নীতির ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত এবং দেশের সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নীতির কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন হল:

  • প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা
  • মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার
  • উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন
  • নারী শিক্ষার উন্নয়ন
  • বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নীতি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার শিক্ষা নীতির ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একটি উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তা

ব্রিটিশ ভারতে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুরু হয়েছিল ছাত্রজীবনে। ১৯৩৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন।

ছাত্রাবস্থায় তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং যুক্তফ্রন্ট আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হন।

১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন এবং এই আন্দোলনে কারাবরণ করেন।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ জয়ী হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানি সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার বাতিল করে দেয়।

১৯৫৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ছিল।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক সরকার নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা যিনি বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।

তিনি ব্রিটিশ ভারতে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুরু করেন এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিম্নরূপ:

  • তিনি ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন।
  • তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং যুক্তফ্রন্ট আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
  • তিনি পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

শেখ মুজিবুর রহমানের ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

পাকিস্তান আন্দোলন, যুক্তবঙ্গ ও দেশভাগ

পাকিস্তান আন্দোলন

পাকিস্তান আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের দ্বারা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা তাদের নিজস্ব ধর্মীয়-ভিত্তিক রাষ্ট্রের দাবি করেছিল।

আন্দোলনটি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের দিকে পরিচালিত করে, যা ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল।

পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতীক

যুক্তবঙ্গ

যুক্তবঙ্গ ছিল ১৯১১ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশ। এটি ভারতের পূর্ব অংশে অবস্থিত ছিল এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত।

যুক্তবঙ্গের মানচিত্র

দেশভাগ

দেশভাগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের বিভাজন এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এটি ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট হয়েছিল। দেশভাগের ফলে ধর্মীয় সহিংসতা এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

দেশভাগের ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা

পাকিস্তান আন্দোলনের কারণ

পাকিস্তান আন্দোলনের বেশ কয়েকটি কারণ ছিল, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের সংখ্যালঘু অবস্থান।
  • মুসলমানদের মধ্যে একটি বৃদ্ধিমান পরিচয়বোধ।
  • মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের সাথে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব।

পাকিস্তান আন্দোলনের নেতারা

পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন:

  • মহম্মদ আলী জিন্নাহ, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।
  • মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, একজন মুসলিম শিক্ষাবিদ, নেতা এবং কবি যিনি পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
  • লিয়াকত আলী খান, পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তান আন্দোলনের প্রভাব

পাকিস্তান আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। এটি ভারতের বিভাজনের দিকে পরিচালিত করেছিল, যা ধর্মীয় সহিংসতা এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার সূত্রপাত করেছিল।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংগ্রাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *