দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি –ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলি

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি হলো এমন একটি হিসাববিজ্ঞান পদ্ধতি যেখানে প্রতিটি লেনদেনের জন্য দুটি দাখিলা করা হয়। একটি দাখিলায় প্রাপ্ত সম্পদ বা সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্য দাখিলায় ব্যয় বা সম্পদ হ্রাস করে।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে ডেবিট এবং ক্রেডিট ব্যবহার করে দাখিলা করা হয়। ডেবিট হলো সম্পদ বা সম্পদ বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে এবং ক্রেডিট হলো ব্যয় বা সম্পদ হ্রাসকে নির্দেশ করে।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলি নিম্নরূপ:

  • সম্পদ বৃদ্ধি: সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ডেবিট করা হয়।
  • সম্পদ হ্রাস: সম্পদ হ্রাসের জন্য ক্রেডিট করা হয়।
  • ব্যয় বৃদ্ধি: ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ক্রেডিট করা হয়।
  • অর্জিত আয়: অর্জিত আয়ের জন্য ডেবিট করা হয়।
  • অর্জিত আয় হ্রাস: অর্জিত আয় হ্রাসের জন্য ক্রেডিট করা হয়।
  • ব্যয় হ্রাস: ব্যয় হ্রাসের জন্য ডেবিট করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের পরিমাণ ₹10,000 বৃদ্ধি পায়, তাহলে এটিকে একটি সম্পদ বৃদ্ধি হিসাবে বিবেচনা করা হবে। তাই এই ক্ষেত্রে ডেবিট করা হবে ₹10,000 এবং ক্রেডিট করা হবে না।

অন্যদিকে, যদি একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কোনো পণ্যের বিক্রয় থেকে ₹10,000 আয় হয়, তাহলে এটিকে অর্জিত আয় হিসাবে বিবেচনা করা হবে। তাই এই ক্ষেত্রে ডেবিট করা হবে ₹10,000 এবং ক্রেডিট করা হবে না।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলির মাধ্যমে হিসাবের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাগুলি হলো:

  • হিসাবের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।
  • হিসাবের তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়।
  • হিসাবের তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়।
  • হিসাবের তথ্যের ব্যবহার করে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা সহজ হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অসুবিধাগুলি হলো:

  • এই পদ্ধতিটি জটিল হতে পারে।
  • এই পদ্ধতিতে অনেক দাখিলা করতে হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাববিজ্ঞান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে হিসাবের ভারসাম্য রক্ষা করা হয় এবং হিসাবের তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি ধারণা

ইতালীর প্রসিদ্ধ গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি (Luca Pacioli) ১৪৯৪খ্রিস্টাব্দে আর্থিক ঘটনা বলি সঠিক ও সুচারুভাবে লিপিবদ্ধ করার একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন ।  উক্ত পদ্ধতিটি দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি নামে পরিচিত ।

  দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি হিসাবরক্ষণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ।  এই পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈত স্বত্বায় কথা উল্লেখ করা হয়েছে । 

প্রতিটি লেনদেনে দুই বা ততোধিক হিসাবখাত থাকে ।  এই হিসাব খাতগুলো দ্বৈত স্বত্বায় লিপিবদ্ধ করা হয় ।  একটি হলো ডেবিট, অপরটি ক্রেডিট ।  দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির মাধ্যমে লেনদেনের দুটি পক্ষ অর্থাৎ ডেভিড ও ক্রেডিট লিপিবদ্ধ করা হয় । 

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ডেবিট লিখনের জন্য সমান অর্থের ক্রেডিট লিখন হবে ।  ফলে বছরের যে কোনো সময় হিসাবের ভোট ডেবিট টাকার অংক মোট ক্রেডিট টাকার অংকের সমান হয় ।

সঠিকভাবে হিসাব প্রণয়নের জন্য যে ব্যবস্থায় লেনদেন সমূহের দ্বৈত স্বত্বায় যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় , তাকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

উদাহরণের সাহায্যে দূতরফা দাখিলা পদ্ধতির ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাববিজ্ঞান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে হিসাবের ভারসাম্য রক্ষা করা হয় এবং হিসাবের তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়।

উদাহরণের সাহায্যে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:

উদাহরণ ১:

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ₹10,000 নগদ অর্থ দিয়ে একটি নতুন সরঞ্জাম ক্রয় করল। এই লেনদেনের জন্য দুটি দাখিলা করা হবে।

প্রথম দাখিলা:

  • হিসাব: সরঞ্জাম
  • ডেবিট: ₹10,000
  • ক্রেডিট: নগদ অর্থ ₹10,000

দ্বিতীয় দাখিলা:

  • হিসাব: নগদ অর্থ
  • ডেবিট: ₹0
  • ক্রেডিট: সরঞ্জাম ₹10,000

এই লেনদেনের ফলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে (সরঞ্জাম ₹10,000) এবং নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে (₹10,000)।

উদাহরণ ২:

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ₹10,000 বিক্রি করে ₹5,000 লাভ করল। এই লেনদেনের জন্য দুটি দাখিলা করা হবে।

প্রথম দাখিলা:

  • হিসাব: বিক্রি
  • ডেবিট: ₹0
  • ক্রেডিট: আয় ₹5,000

দ্বিতীয় দাখিলা:

  • হিসাব: আয়
  • ডেবিট: ₹5,000
  • ক্রেডিট: বিক্রি ₹0

এই লেনদেনের ফলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে (₹5,000) এবং বিক্রি হ্রাস পেয়েছে (₹0)।

উদাহরণ ৩:

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ₹10,000 টাকা খরচ করল। এই লেনদেনের জন্য দুটি দাখিলা করা হবে।

প্রথম দাখিলা:

  • হিসাব: খরচ
  • ডেবিট: ₹10,000
  • ক্রেডিট: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ₹10,000

দ্বিতীয় দাখিলা:

  • হিসাব: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
  • ডেবিট: ₹0
  • ক্রেডিট: খরচ ₹10,000

এই লেনদেনের ফলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে (₹10,000) এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্রাস পেয়েছে (₹10,000)।

উপরের উদাহরণগুলি থেকে বোঝা যায় যে, দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের জন্য দুটি দাখিলা করা হয়। একটি দাখিলায় সম্পদ বা সম্পদ বৃদ্ধি হয় এবং অন্য দাখিলায় ব্যয় বা সম্পদ হ্রাস হয়। এইভাবে, হিসাবের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *