১৯৭২ সংবিধানকে কেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান গণ্য করা হয়

সংবিধান একটি রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। একটি দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ভর করে সংবিধানের উপর। সর্বোপরি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে সংবিধানে।

১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময় যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়ে- ছে তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান প্রণয়ন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

এবং ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশেষে ১৯৭২সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকরী হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯৭২সালে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্য মান ছিল যার জন্য সংবিধান কে বলা হয় (One of the best constitution of the world) বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মধ্যে একটি।

বাংলাদেশের সংবিধান কে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণঃ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবি- ধান গৃহীত হওয়ার পর ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ বার এর সংবিধান সংশোধিত হয়েছে।

এতদ্বসত্ত্বেও এর সংবি ধান কে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মধ্যে একটি।  সংবিধানকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মধ্যে একটি বলার যুক্তির কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল। যথাঃ

১। লিখিত সংবিধানঃ যে কোনো উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংবিধানকে অবশ্যই লিখিত হতে হবে, যাতে সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃতি হয়।

যেটা বাংলাদেশের সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সংবিধান এক টি লিখিত সংবিধান এবং সর্বসম্মতিক্রমে এর সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়।

২। সংক্ষিপ্তঃ একটি উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হল সংবিধানকে খুব দীর্ঘায়িত করা যাবে না। সংবিধান দীর্ঘ হলে তার অর্থ ও ব্যাখ্যা ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দেয়।

বাংলাদেশের সংবিধান একটি সংক্ষিপ্ত সংবিধান। এ সংবিধান ১৫৩টি অনু- চ্ছেদ (৭২ এর সংবিধানে ৪ টি তপশিল আছে)বর্তমানে ৭টি তফসিল ও .১১টি অধ্যায়ে বিভক্ত।

৩। মধ্যপন্থাঃ উত্তম সংবিধান কে অবশ্যই মধ্যপন্থা হতে হবে। অর্থাৎ সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয় এ দুইয়ের মাঝে একটা ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সময়ও প্রয়োজনমতো সংবিধান সংশোধন করা  যায়।

৪। বিস্তৃতিঃ বিস্তৃতি সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সংবিধান হচ্ছে জাতীয় জীবন পদ্ধতি।

অতএব রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ক্ষমতা প্রয়োগ পদ্ধতি, শাসক ও শাসিতের সম্পর্কের  প্রবৃত্তি সম্পর্কে বিধি বিধান সন্নিবেশিত থাকা প্রয়োজন।

৫। জনমতের  প্রাধান্যঃ একটি উত্তম সংবিধানের প্রাধান্য থাকতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানে তা সুস্পষ্টভাবে সন্নি- বেশিত আছে।

অনুচ্ছেদ ৭-এ বলা হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনমতের সংবিধান প্রণয়- ন সে অধিক কার্যকরী হয়ে থাকে।

৬। সময় উপযোগীঃ সংবিধান এমন ভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে  পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে সহজে খাপ খাইয়ে চলতে পারে।

এজন্য বলা উত্তর সংবিধান হবে সময় ও যুগোপযোগী। ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশ সংবিধান সময় উপ যোগী সংবিধান।

৭। ক্ষমতার ভারসাম্যঃ উত্তম সংবিধানকে সরকারের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের সংবিধা- নে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।

সরকার তিনটি আইন,শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে ছে এবং একে অপরের হস্তক্ষেপ রাখা হয়। যা উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৮। মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিতঃ একটি উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত হওয়া।

বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ের দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংযোজিত হয়েছে যা একটি অন্যতম উত্তম সংবিধান হিসেবে গড়ে উঠেছে।

৯। মুখপাত্রঃ উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শুরুতে একটি প্রস্তাবনা থাকা।

যাতে করে জাতির আশা-আকা ঙ্ক্ষা বিশ্বাস আদর্শ ও মৌলিক প্রয়োজন সন্নিবেশিত থাকে। বাংলাদেশ সংবিধান সংবিধানের শুরুতে একটি আছে যাতে  আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন  ঘটেছে।

১০। বিচার বিভাগের প্রাধান্যঃ একটি রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ আবশ্যক। স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।

সমাজ ব্যবস্থায় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধা- নে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রদান করা  হয়েছে।

১১। আইনসভার সার্বভৌমত্বঃ বাংলাদেশের ১৯৭২সালের সংবিধানে আইনসভার সার্বভৌমত্ব  ঘোষিত হয়েছে ।

সকল আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া হয়েছে আইনসভাকে। আইনসভা গঠিত হবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাহায্য।

১২। রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিঃ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি গুলো উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চারটি উল্লেখ আছে। উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য।

▣ জাতীয়তাবাদ 

▣ সমাজতন্ত্র 

▣ গণতন্ত্র 

▣ ধর্মনিরপেক্ষ 

১৩। সংবিধানের প্রাধান্যঃ সংবিধানের প্রাধান্য একটা উত্তম সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সংবিধান সংবিধানেরও  সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃতি। বাংলাদেশের সংবিধান হলো সর্বোচ্চ আইন।

মূল্যায়নঃ উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকলে আমরা একটি সংবিধানকে উত্তম সংবিধান বলতে পারি তার সকল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের ১৯৭২সালের সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে।

আইনে বৃষ্টি সাম্য ধর্মীয় সাদি মূল জনম মানবাধিকার সমুন্নত সময়ের উপযোগী গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ বাক স্বাধীনতা চলাফেরার স্বাধীনতা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান কে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মধ্যে একটি বলা হয়।