সংস্কৃত ভাষা বলতে কী বোঝায়? এর উৎপত্তি কিভাবে হল?

সংস্কৃত ভাষা বলতে কি বুঝ?

সংস্কৃত ভাষা বলতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান দুই বিভাগের একটি “শতম” ভুক্ত ভাষাকে বোঝায়। এটি প্রাচীন ভারতে প্রচলিত একটি মৃত ভাষা। তবে, এটি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনামের বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখনও ব্যবহৃত হয়।

সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস খুবই দীর্ঘ। এটি প্রাচীন ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকে প্রচলিত ছিল। বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছিল।

সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং পরিশীলিত। পাণিনি রচিত অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ গ্রন্থ। এই গ্রন্থটিতে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সংস্কৃত ভাষা ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং জৈনধর্মের ধর্মীয় ভাষা। এছাড়াও, সংস্কৃত ভাষা ভারতীয় দর্শন, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য প্রভৃতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সংস্কৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য হল:

  • **এটি একটি শতম ভাষা।
  • **এটি একটি মৃত ভাষা।
  • **এটি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনামের বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখনও ব্যবহৃত হয়।
  • **এটির ইতিহাস খুবই দীর্ঘ।
  • এটির ব্যাকরণ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং পরিশীলিত।
  • **এটি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব হল:

  • **এটি ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • **এটি হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং জৈনধর্মের ধর্মীয় ভাষা।
  • **এছাড়াও, সংস্কৃত ভাষা ভারতীয় দর্শন, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য প্রভৃতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সংস্কৃত বর্ণ কয়টি ও কি কি?

সংস্কৃত বর্ণমালায় মোট ৪৭টি বর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি স্বরবর্ণ এবং ৩৩টি ব্যঞ্জনবর্ণ

স্বরবর্ণ

  • অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ, ঌ, এ, ঐ, ও, ঔ

ব্যঞ্জনবর্ণ

  • ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ

স্বরবর্ণ

স্বরবর্ণ হলো সেইসব বর্ণ যা স্বয়ং উচ্চারিত হয়। অর্থাৎ, স্বরবর্ণ উচ্চারণের জন্য অন্য কোনো অক্ষরের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। সংস্কৃত ভাষায় মোট ১৪টি স্বরবর্ণ রয়েছে। এগুলি হল:

  • অ: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • আ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • ই: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • ঈ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • উ: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • ঊ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • ঋ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • ৠ: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • ঌ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • এ: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • ঐ: একটি দীর্ঘ স্বর।
  • ও: একটি হ্রস্ব স্বর।
  • ঔ: একটি দীর্ঘ স্বর।

ব্যঞ্জনবর্ণ

ব্যঞ্জনবর্ণ হলো সেইসব বর্ণ যা স্বয়ং উচ্চারিত হয় না। অর্থাৎ, ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের জন্য অন্য কোনো অক্ষরের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। সংস্কৃত ভাষায় মোট ৩৩টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। এগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

  • স্পর্শবর্ণ (ষোড়শ): ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
  • অন্তঃস্থবর্ণ (দশ): ত, থ, দ, ধ, ন
  • উষ্মবর্ণ (পাঁচ): প, ফ, ব, ভ, ম
  • অযোগবাহবর্ণ (ছয়): য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ

স্পর্শবর্ণগুলি মুখের বিভিন্ন স্থানে উচ্চারিত হয়। অন্তঃস্থবর্ণগুলি মুখের ভেতরেই উচ্চারিত হয়। উষ্মবর্ণগুলি উষ্ণতা প্রকাশ করে। অযোগবাহবর্ণগুলি স্বরবর্ণ ছাড়া উচ্চারিত হয় না।

সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি

সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখার একটি শাখা থেকে হয়েছে। এই শাখাটির প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে আছে বৈদিক সংস্কৃত, অভেস্তীয়, পালি এবং পুরন ইরানীয়।

সংস্কৃত ভাষাটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে উত্তর ভারতের গান্ধার অঞ্চলে উদ্ভব হয়েছিল। এটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষা থেকে বিকশিত হয়েছিল, যা বেদ নামক ধর্মীয় গ্রন্থের ভাষা ছিল।

সংস্কৃত ভাষাটি প্রাচীন ভারতের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল। এটি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের ধর্মীয় ভাষা ছিল। এছাড়াও, এটি শাসন, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বর্তমানে সংস্কৃত ভাষাটি একটি মৃত ভাষা হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, এটি এখনও ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, এটি ভারতীয় সাহিত্য, শিল্প এবং দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কিছু পণ্ডিত মনে করেন যে সংস্কৃত ভাষাটি উত্তর ভারতের আদিবাসী ভাষা থেকে উদ্ভব হয়েছিল। অন্যরা মনে করেন যে সংস্কৃত ভাষাটি মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে আগমনকারী ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগুলি থেকে বিকশিত হয়েছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *