মৌলিক সংখ্যা কাকে বল? মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র

মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে

গণিতের পরিভাষায়, মৌলিক সংখ্যা হল এমন স্বাভাবিক সংখ্যা যার কেবলমাত্র দুটি পৃথক উৎপাদক আছে: ১ এবং ঐ সংখ্যাটি নিজে। ১ এর চেয়ে বড় যে সকল সংখ্যা মৌলিক না তাদেরকে যৌগিক সংখ্যা বলে। অর্থাৎ যে সংখ্যাকে অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে।

প্রথম ১০টি মৌলিক সংখ্যা হল:

২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯

মৌলিক সংখ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল:

    • ১ এর চেয়ে বড় যেকোনো মৌলিক সংখ্যার বর্গমূলও মৌলিক সংখ্যা।
    • যদি কোনও মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল হয়, তাহলে সেই সংখ্যাটি ২।
    • যেকোনো মৌলিক সংখ্যাকে ১ এর চেয়ে বড় যেকোনো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না।
    • যেকোনো মৌলিক সংখ্যাকে ১ এবং ঐ সংখ্যাটি নিজে ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না।

মৌলিক সংখ্যা গণিতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মৌলিক সংখ্যা ব্যবহার করেই পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়। এছাড়াও, কোডিং, ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক সংখ্যার ব্যবহার রয়েছে।

মৌলিক সংখ্যার আরো কিছু উদাহরণ

মৌলিক সংখ্যার আরো কিছু উদাহরণ হল:

  • ৩১
  • ৩৭
  • ৪১
  • ৪৩
  • ৪৭
  • ৫৩
  • ৫৯
  • ৬১
  • ৬৭
  • ৭১
  • ৭৩
  • ৭৯
  • ৮৩
  • ৮৯
  • ৯৭
  • ১০১
  • ১০৩
  • ১০৭
  • ১০৯
  • ১১৩

এছাড়াও, অসীম সংখ্যক মৌলিক সংখ্যা রয়েছে।

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য একটি সহজ পদ্ধতি হল পরীক্ষামূলক ভাগ। এই পদ্ধতিতে, আমরা যে সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা তা নির্ণয় করতে চাই, সেই সংখ্যাটিকে ২ থেকে শুরু করে তার বর্গমূল পর্যন্ত সকল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে দেখি। যদি সেই সংখ্যাটি কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ হয়ে যায়, তাহলে সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়। অন্যথায়, সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি ৫৩ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা তা নির্ণয় করতে চাই, তাহলে আমরা নিম্নরূপ পরীক্ষা করব:

৫৩ / 2 = 26.5
৫৩ / 3 = 17.6666
৫৩ / 4 = 13.25
৫৩ / 5 = 10.6
৫৩ / 6 = 8.8333
৫৩ / 7 = 7.5714
৫৩ / 8 = 6.625
৫৩ / 9 = 5.8889
৫৩ / 10 = 5.3

এই পরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৫৩ সংখ্যাটিকে কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না। তাই, ৫৩ একটি মৌলিক সংখ্যা।

এছাড়াও, ইরাটস্থেনেসের ছাকনি নামক একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করেও মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। এই অ্যালগরিদমটি খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করতে পারে।

মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ

মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ নিম্নরূপ:

  • প্রধান মৌলিক সংখ্যা (Prime number): যে সকল মৌলিক সংখ্যাকে 2 দ্বারা ভাগ করা যায় না, সেগুলোকে প্রধান মৌলিক সংখ্যা বলে। উদাহরণস্বরূপ, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯, ৩১ ইত্যাদি প্রধান মৌলিক সংখ্যা।
  • সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যা (Twin prime number): যে দুটি মৌলিক সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ২ হয়, সেগুলোকে সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যা বলে। উদাহরণস্বরূপ, (৩, ৫), (৫, ৭), (১১, ১৩), (১৭, ১৯), (২৩, ২৯), (৪১, ৪৩), (৫৯, ৬১), (৭১, ৭৩), (৭৯, ৮৩) ইত্যাদি সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যা।
  • জোড় মৌলিক সংখ্যা (Even prime number): যে মৌলিক সংখ্যা জোড় হয়, সেগুলোকে জোড় মৌলিক সংখ্যা বলে। শুধুমাত্র একটি জোড় মৌলিক সংখ্যা রয়েছে, যা হল ২।
  • অযুগ্ম মৌলিক সংখ্যা (Odd prime number): যে মৌলিক সংখ্যা জোড় নয়, সেগুলোকে অযুগ্ম মৌলিক সংখ্যা বলে। ২ ছাড়া সকল মৌলিক সংখ্যাই অযুগ্ম মৌলিক সংখ্যা।
  • একক মৌলিক সংখ্যা (Single prime number): যে মৌলিক সংখ্যার সাথে কোনও সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যা নেই, সেগুলোকে একক মৌলিক সংখ্যা বলে। উদাহরণস্বরূপ, ২, ১৯, ২৩, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৫৩, ৫৯, ৬১ ইত্যাদি একক মৌলিক সংখ্যা।
  • জোড়া মৌলিক সংখ্যার জোড়া (Pair of twin primes): যে দুই জোড়া সম্পর্কিত মৌলিক সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ২ হয়, সেগুলোকে জোড়া মৌলিক সংখ্যার জোড়া বলে। উদাহরণস্বরূপ, (৩, ৫), (৫, ৭), (১১, ১৩), (১৭, ১৯), (২৩, ২৯) ইত্যাদি জোড়া মৌলিক সংখ্যার জোড়া।

এছাড়াও, মৌলিক সংখ্যার আরও কিছু প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন:

  • প্রকৃত মৌলিক সংখ্যা (Natural prime number): যে মৌলিক সংখ্যা ১ এর চেয়ে বড়, সেগুলোকে প্রকৃত মৌলিক সংখ্যা বলে। উদাহরণস্বরূপ, ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯ ইত্যাদি প্রকৃত মৌলিক সংখ্যা।
  • উৎপাদক মৌলিক সংখ্যা (Factorial prime number): যে মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল একটি বিজোড় মৌলিক সংখ্যা, সেগুলোকে উৎপাদক মৌলিক সংখ্যা বলে। উদাহরণস্বরূপ, ২, ৫, ১১, ২৩, ২৯, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৫৩ ইত্যাদি উৎপাদক মৌলিক সংখ্যা।
  • সম্ভাব্য মৌলিক সংখ্যা (Probable prime number): যে সংখ্যাটি পরীক্ষামূলক ভাগ পদ্ধতিতে মৌলিক সংখ্যা বলে মনে হয়, কিন্তু তা প্রমাণিত হয়নি, সেগুলোকে সম্ভাব্য মৌলিক সংখ্যা বলে।

মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ গণিতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ ব্যবহার করেই পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্যের বিভিন্ন প্রমাণ দেওয়া হয়।

মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য

মৌলিক সংখ্যার কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

  • ১ এর চেয়ে বড় সকল স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে কমপক্ষে একটি মৌলিক সংখ্যা রয়েছে। এটি পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য দ্বারা প্রমাণিত।
  • যেকোনো মৌলিক সংখ্যার কেবলমাত্র দুটি পৃথক উৎপাদক রয়েছে: ১ এবং ঐ সংখ্যাটি নিজে।
  • কোনো মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল একটি বিজোড় মৌলিক সংখ্যা।
  • কোনো মৌলিক সংখ্যাকে 2 দ্বারা ভাগ করা যায় না।
  • যে কোনও মৌলিক সংখ্যার বর্গমূল একটি মৌলিক সংখ্যা হতে পারে বা নাও পারে।

মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি গণিতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করেই পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্যের বিভিন্ন প্রমাণ দেওয়া হয়।

এছাড়াও, মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করেই বিভিন্ন সংখ্যা তত্ত্বের সমস্যার সমাধান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মৌলিক সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করেই দেখা যায় যে, অসীম সংখ্যক মৌলিক সংখ্যা রয়েছে।

কিভাবে মৌলিক সংখ্যা বের করব

মৌলিক সংখ্যা বের করার জন্য দুটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে:

পরীক্ষামূলক ভাগ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে, আমরা যে সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা তা নির্ণয় করতে চাই, সেই সংখ্যাটিকে ২ থেকে শুরু করে তার বর্গমূল পর্যন্ত সকল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে দেখি। যদি সেই সংখ্যাটি কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ হয়ে যায়, তাহলে সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়। অন্যথায়, সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি ৫৩ সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা তা নির্ণয় করতে চাই, তাহলে আমরা নিম্নরূপ পরীক্ষা করব:

৫৩ / 2 = 26.5
৫৩ / 3 = 17.6666
৫৩ / 4 = 13.25
৫৩ / 5 = 10.6
৫৩ / 6 = 8.8333
৫৩ / 7 = 7.5714
৫৩ / 8 = 6.625
৫৩ / 9 = 5.8889
৫৩ / 10 = 5.3

এই পরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৫৩ সংখ্যাটিকে কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না। তাই, ৫৩ একটি মৌলিক সংখ্যা।

ইরাটস্থেনেসের ছাকনি

এই পদ্ধতিতে, আমরা প্রথমে ১ থেকে শুরু করে সেই সংখ্যা পর্যন্ত সকল সংখ্যার তালিকা তৈরি করি। তারপর, আমরা ২ থেকে শুরু করে সেই সংখ্যা পর্যন্ত সকল সংখ্যার বর্গমূল পর্যন্ত সকল সংখ্যাকে বাদ দিয়ে দেই। যে সকল সংখ্যা অবশিষ্ট থাকে, সেগুলোই মৌলিক সংখ্যা।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি ৫০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা বের করতে চাই, তাহলে আমরা নিম্নরূপ করব:

১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০
১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২২
২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২
৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২
৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০

এইভাবে, আমরা দেখতে পাই যে, ১ থেকে ৫০ পর্যন্ত মোট ২০ টি মৌলিক সংখ্যা রয়েছে।

এছাড়াও, বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেও মৌলিক সংখ্যা বের করা যায়।

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র নেই। মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

পরীক্ষামূলক ভাগ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে, আমরা যে সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা তা নির্ণয় করতে চাই, সেই সংখ্যাটিকে ২ থেকে শুরু করে তার বর্গমূল পর্যন্ত সকল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে দেখি। যদি সেই সংখ্যাটি কোনও সংখ্যা দ্বারা ভাগ হয়ে যায়, তাহলে সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়। অন্যথায়, সেই সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা।

ইরাটস্থেনেসের ছাকনি

এই পদ্ধতিতে, আমরা প্রথমে ১ থেকে শুরু করে সেই সংখ্যা পর্যন্ত সকল সংখ্যার তালিকা তৈরি করি। তারপর, আমরা ২ থেকে শুরু করে সেই সংখ্যা পর্যন্ত সকল সংখ্যার বর্গমূল পর্যন্ত সকল সংখ্যাকে বাদ দিয়ে দেই। যে সকল সংখ্যা অবশিষ্ট থাকে, সেগুলোই মৌলিক সংখ্যা।

কম্পিউটার প্রোগ্রাম

বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেও মৌলিক সংখ্যা বের করা যায়। এই প্রোগ্রামগুলি খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করতে পারে।

মৌলিক সংখ্যার সূত্রের জন্য গবেষণা চলছে। গবেষকরা আশা করছেন যে, ভবিষ্যতে তারা এমন একটি সূত্র আবিষ্কার করতে পারবেন যা দিয়ে খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *