সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান

ডিবির হাওর

সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত ডিবির হাওর বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটি “লাল শাপলার বিল” নামেও পরিচিত। এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। এই চারটি বিলকে একত্রে লাল শাপলার বিল বলা হয়ে থাকে, চারটি সংযুক্ত বিলের আয়তন ৯০০ একর বা ৩.৬৪ বর্গকিমিঃ।
Image of সিলেট জেলার ডিবির হাওর

ডিবির হাওর জুড়ে লাল শাপলার সমারোহ দেখা যায়। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে হাওরে লাল শাপলার সমারোহ ঘটে। এই সময় হাওরকে লাল শাপলার বিছানায় পরিণত হয়। লাল শাপলার সৌন্দর্য যেকোনো দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে।

ডিবির হাওরে শাপলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখিও দেখা যায়। হাওরে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

ডিবির হাওর ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুন-আগস্ট মাস। এই সময় হাওরে লাল শাপলার সমারোহ দেখা যায়।

ডিবির হাওর ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা বাস যোগে জৈন্তাপুর উপজেলায় যেতে হয়। জৈন্তাপুর উপজেলায় থেকে ডিবির হাওর মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

হাকালুকি হাওর

সিলেট জেলার দর্শনীয় হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া, এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার জুড়ে বিস্তৃত।

হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, বহু বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখা উপজেলার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাকালুকি’ বা ‘হাঙ্গর লুকি’। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তার রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি’ বা ‘হাকালুকি’।

হাকালুকি হাওরের বিশাল জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী এবং পানাই নদী। এই জলরাশি হাওরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে হাওর সংলগ্ন এলাকা পাবিত হয়ে বিশাল রূপ ধারন করে। এই সময় পানির গভীরতা হয় ২-৬ মিটার।

হাকালুকি হাওরে প্রায় ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। প্রায় সারাবছরই বিলগুলিতে পানি থাকে। উলেখযোগ্য বিলসমূহ হলো: চাতলা বিল, চৌকিয়া বিল, ডুলা বিল, পিংলার কোণা বিল, ফুটি বিল, তুরাল বিল, তেকুনি বিল, পাওল বিল, জুয়ালা বিল,

হাকালুকি হাওর পরিযায়ী পাখির জন্য বিখ্যাত। শীতকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে। এই সময় হাওরকে পরিযায়ী পাখির বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ। হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান, গম, আউশ, পাট, তিল, সরিষা ইত্যাদি ফসল চাষ হয়। এছাড়াও, হাওরে মাছ চাষ করা হয়।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক হাওর ভ্রমণে আসে। হাওরে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

হাকালুকি হাওর ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ-এপ্রিল মাস। এই সময় হাওরে পাখি ও ফুলের সমারোহ দেখা যায়।

হাকালুকি হাওর ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা বাস যোগে কুলাউড়া উপজেলায় যেতে হয়। কুলাউড়া উপজেলায় থেকে হাকালুকি হাওর মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

হাকালুকি হাওরের কিছু বিশেষ আকর্ষণ হলো:

    • বিশাল জলরাশি ও বিস্তীর্ণ এলাকা
    • পরিযায়ী পাখির বিচরণ
    • বিভিন্ন ধরনের ফুল ও উদ্ভিদ
    • নৌকা ভ্রমণের সুযোগ

হাকালুকি হাওর ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।

রাতারগুল

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন। এটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল জলাবনের আয়তন প্রায় ৩০০ হেক্টর।

রাতারগুল জলাবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে বিশাল বিশাল বন, জলরাশি, এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। রাতারগুল জলাবনের বনগুলিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বনজঙ্গল, কেওড়া, জারুল, বকুল, তাল, খেজুর, আম, কাঁঠাল, ইত্যাদি।

রাতারগুল জলাবনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। শীতকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। এই সময় রাতারগুল জলাবন পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।

রাতারগুল জলাবনের বিশাল জলরাশিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন প্রজাতির জলচর প্রাণী রয়েছে।

রাতারগুল জলাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক রাতারগুল ভ্রমণে আসে। রাতারগুল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ-এপ্রিল মাস। এই সময় রাতারগুল জলাবনে পাখি ও ফুলের সমারোহ দেখা যায়।

রাতারগুল জলাবন ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা বাস যোগে গোয়াইনঘাট উপজেলায় যেতে হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলায় থেকে রাতারগুল জলাবন মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

রাতারগুল জলাবনের কিছু বিশেষ আকর্ষণ হলো:

  • বিশাল বিশাল বন
  • জলরাশি
  • বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী
  • পরিযায়ী পাখির বিচরণ
  • নৌকা ভ্রমণের সুযোগ

রাতারগুল জলাবন ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার স্থানীয় নাম মায়াবী ঝর্ণা। এই ঝর্ণার মোট তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপটি প্রায় ১০ ফুট উঁচু। দ্বিতীয় ধাপটি প্রায় ২০ ফুট উঁচু। তৃতীয় ধাপটি প্রায় ৪০ ফুট উঁচু। তৃতীয় ধাপটিতে একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। সুড়ঙ্গের শেষ এখনও অজানা।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর সম্মিলন স্থানটিকে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তুলেছে। ঝর্ণার তলদেশের পাথরের গায়ে বিভিন্ন প্রকার জীবন্ত গাছপালা জন্মেছে। ঝর্ণার পানি স্বচ্ছ ও ঠান্ডা। ঝর্ণার চারপাশে সবুজ গাছপালা ও ফুলের সমারোহ দেখা যায়।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। এই সময় ঝর্ণায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তবে বর্ষাকাল ছাড়াও অন্যান্য সময়েও ঝর্ণাটি দেখা যায়।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস যোগে জাফলং যেতে হয়। জাফলং থেকে ঝর্ণাটি মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:

    • ঝর্ণার তলদেশে পিচ্ছিল পাথর থাকায় সাবধানে চলাচল করতে হবে।
    • ঝর্ণার পানিতে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
    • ঝর্ণার চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই ঝর্ণা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। ঝর্ণাটি বড়হিল ঝর্ণা নামেও পরিচিত। এটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্থুমাই গ্রামে অবস্থিত।

পান্থুমাই ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১৩০ ফুট। ঝর্ণাটি পাহাড়ের খাঁজে অবস্থিত। ঝর্ণার পানি ঝর্ণার তলদেশে গিয়ে পিয়াইন নদীতে মিশে যায়।

পান্থুমাই ঝর্ণা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর সম্মিলন স্থানটিকে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তুলেছে। ঝর্ণার তলদেশের পাথরের গায়ে বিভিন্ন প্রকার জীবন্ত গাছপালা জন্মেছে। ঝর্ণার পানি স্বচ্ছ ও ঠান্ডা। ঝর্ণার চারপাশে সবুজ গাছপালা ও ফুলের সমারোহ দেখা যায়।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। এই সময় ঝর্ণায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তবে বর্ষাকাল ছাড়াও অন্যান্য সময়েও ঝর্ণাটি দেখা যায়।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস যোগে জাফলং যেতে হয়। জাফলং থেকে ঝর্ণাটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:

  • ঝর্ণার তলদেশে পিচ্ছিল পাথর থাকায় সাবধানে চলাচল করতে হবে।
  • ঝর্ণার পানিতে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ঝর্ণার চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের কিছু টিপস:

  • পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। এই সময় ঝর্ণায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তবে বর্ষাকাল ছাড়াও অন্যান্য সময়েও ঝর্ণাটি দেখা যায়।
  • পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সিলেট শহর থেকে বাস, সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস যোগে জাফলং যেতে হয়। জাফলং থেকে ঝর্ণাটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
  • পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের সময় সাবধানে চলাচল করতে হবে। ঝর্ণার তলদেশে পিচ্ছিল পাথর থাকায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ঝর্ণার পানিতে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঝর্ণার পানি শীতল হতে পারে।
  • ঝর্ণার চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঝর্ণার সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না।

পান্থুমাই ঝর্ণা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই ঝর্ণা ভ্রমণে আসে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *