স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কী?

ইসলামি শরিয়তে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যগুলো নিম্নরূপ:

  • ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন: স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর ভরণপোষণ, পোশাকপরিচ্ছদ ও আবাসনব্যবস্থা করা। স্ত্রীর জন্য স্বামীর দ্বারা নির্ধারিত আবাসনে অবস্থান করা এবং স্বামীর নির্দেশিত কাজগুলো করা স্ত্রীর কর্তব্য।
  • স্বামীর আনুগত্য: স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে স্বামীর আদেশ যদি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী হয়, তাহলে সেই আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব নয়।
  • সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন: স্বামীকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর সাথে সদয় ও ভদ্র ব্যবহার করা, তার সাথে কথা বলার সময় ভদ্র ভাষা ব্যবহার করা, এবং তার সাথে দেখা করার সময় সৌন্দর্য ও পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখা স্ত্রীর কর্তব্য।
  • স্বামীর সম্পদ হেফাজত: স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর সম্পদ অপচয় করা, নষ্ট করা, বা অন্যের কাছে হস্তান্তর করা স্ত্রীর জন্য হারাম।
  • স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা: স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর ভালোবাসা ও সুখ-শান্তির জন্য সর্বদা চেষ্টা করা স্ত্রীর কর্তব্য।

এছাড়াও, স্ত্রীর উচিত স্বামীর সাথে পরামর্শ করে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া, এবং স্বামীর পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যগুলো পালন করলে সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ কেমন হবে?

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ হবে সদয়, ভদ্র ও মমতাপূর্ণ। স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা। স্বামীর আচরণে স্ত্রীর মনে নিরাপত্তা ও বিশ্বাসবোধ জাগ্রত হওয়া উচিত।

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণের কিছু দিকনির্দেশনা নিম্নরূপ:

  • সদয় ও ভদ্র ব্যবহার: স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে সবসময় সদয় ও ভদ্র ব্যবহার করা। স্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় ভদ্র ভাষা ব্যবহার করা, তার সাথে হাসাহাসি করা, এবং তার সাথে সময় কাটানো স্বামীর কর্তব্য।
  • ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন: স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা। স্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় তার নাম ধরে ডাকা, তার সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করা, এবং তার সাথে সময় কাটানো স্বামীর কর্তব্য।
  • মর্যাদা প্রদর্শন: স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা। স্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, তার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, এবং তার সামনে অন্যদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা স্বামীর কর্তব্য।
  • সন্তোষ প্রদান: স্বামীর উচিত স্ত্রীর সন্তুষ্টি প্রদানের চেষ্টা করা। স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা, তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা, এবং তার সাথে সুখী জীবনযাপন করা স্বামীর কর্তব্য।

স্বামীর এই আচরণে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যবোধ জাগ্রত করবে। ফলে সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।

এই ৫ কারণেই স্বামীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে দূরে সরে যান স্ত্রী

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একটি জটিল ও স্পর্শকাতর সম্পর্ক। এই সম্পর্কের স্থায়িত্ব নির্ভর করে দুজনের মধ্যে ভালোবাসা, বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার উপর। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, স্বামীর কিছু ভুল আচরণের কারণে স্ত্রী তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে এবং দূরে সরে যায়।

এখানে এমন ৫টি কারণ দেওয়া হলো যার কারণে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারে:

১. মানসিক নির্যাতন: স্বামীর মানসিক নির্যাতন স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করা, তাকে অপমান করা, তার সিদ্ধান্তের প্রতি অবজ্ঞা করা, এবং তাকে হুমকি দেওয়া। এই ধরনের আচরণের ফলে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে এবং দূরে সরে যায়।

২. শারীরিক নির্যাতন: শারীরিক নির্যাতনও স্ত্রীর জন্য একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের ফলে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি ভয় ও ঘৃণা অনুভব করে এবং তার থেকে দূরে সরে যেতে চায়।

৩. অবহেলা: স্বামীর অবহেলা স্ত্রীর মনকে ভেঙে দেয়। স্বামীর অবহেলার মধ্যে রয়েছে স্ত্রীর সাথে সময় না কাটানো, তার চাহিদা পূরণ না করা, এবং তার সাথে কথা না বলা। এই ধরনের আচরণের ফলে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে এবং তার সাথে সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে চায়।

৪. অর্থনৈতিক সমস্যা: অর্থনৈতিক সমস্যাও স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ হারানোর একটি কারণ হতে পারে। স্বামী যদি সংসারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে স্ত্রী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার থেকে দূরে সরে যেতে চায়।

৫. মতের অমিল: মতের অমিল সব সম্পর্কেই থাকে। কিন্তু যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল এতটাই বেড়ে যায় যে তাদের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া থাকে না, তাহলে তা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মতের অমিলের ফলে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটি করতে থাকে এবং তার থেকে দূরে সরে যেতে চায়।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে দুজনের মধ্যে ভালোবাসা, বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সহযোগিতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং তার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে, স্ত্রীরও স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

স্বামী-স্ত্রীর হক

স্বামী-স্ত্রীর হক

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে। একে অপরের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্বকে হক বলা হয়।

স্বামীর হক

  • স্ত্রীর ভরণপোষণ: স্বামীর প্রধান দায়িত্ব হলো স্ত্রীর ভরণপোষণ করা। অর্থাৎ, স্ত্রীর খাওয়া-পরা, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা।
    Image of স্বামীর হক
  • স্ত্রীর আনুগত্য: স্ত্রীর উচিত স্বামীর আনুগত্য করা। তবে স্বামীর আদেশ যদি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী হয়, তাহলে সেই আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব নয়।
  • স্ত্রীর সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন: স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা। স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা, তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, এবং তার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • স্ত্রীর সম্পদ হেফাজত: স্বামীর উচিত স্ত্রীর সম্পদ হেফাজত করা। স্ত্রীর সম্পদ অপচয় করা, নষ্ট করা, বা অন্যের কাছে হস্তান্তর করা স্বামীর জন্য হারাম।
  • স্ত্রীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা: স্বামীর উচিত স্ত্রীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা, তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা, এবং তার সাথে সুখী জীবনযাপন করা।

স্ত্রীর হক

  • স্বামীর ভরণপোষণ: স্ত্রীরও দায়িত্ব হলো স্বামীর ভরণপোষণ করা। তবে স্বামীর ভরণপোষণের দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামীর উপরই বর্তায়।
  • স্বামীর আনুগত্য: স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীরও দায়িত্ব। তবে স্বামীর আদেশ যদি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী হয়, তাহলে সেই আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব নয়।
  • স্বামীর সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন: স্ত্রীরও উচিত স্বামীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা। স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করা, তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, এবং তার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • স্বামীর সম্পদ হেফাজত: স্ত্রীরও উচিত স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা। স্বামীর সম্পদ অপচয় করা, নষ্ট করা, বা অন্যের কাছে হস্তান্তর করা স্ত্রীর জন্য হারাম।
  • স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা: স্ত্রীরও উচিত স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। স্বামীর চাহিদা পূরণ করা, তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা, এবং তার সাথে সুখী জীবনযাপন করা।

স্বামী-স্ত্রীর হক সম্পর্কে সচেতন থাকলে সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *