বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

ইংরেজ শাসন আমলে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন

ইংরেজ শাসন আমলে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন একটি দীর্ঘমেয়াদী ও ঐতিহাসিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলার স্বাধীনতা অর্জন করা। এই আন্দোলন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রূপ নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল।

ইংরেজরা ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই বাংলায় ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসন বাংলার মানুষের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও শোষণ চালায়। ফলে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষের দিকে। এই পর্যায়ে আন্দোলন ছিল মূলত আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বের নেতৃত্বে। এই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন ফকির মুহম্মদ মঈনউদ্দীন, হাজী শরিয়তুল্লাহ, টিপু সুলতান, মীর কাসেম প্রমুখ।

১৯শ শতকে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন একটি নতুন রূপ নেয়। এই পর্যায়ে আন্দোলন ছিল মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের নেতৃত্বে। এই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকৃষ্ণ পরমহংস, রামকৃষ্ণ মিশন, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন প্রমুখ।

২০শ শতকে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন একটি চূড়ান্ত রূপ নেয়। এই পর্যায়ে আন্দোলন ছিল মূলত জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য আন্দোলন ছিল অসহযোগ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রমুখ।

বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে, বাংলা ভাগ হয়ে দুই অংশে বিভক্ত হয়।

বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে বাংলার মানুষ রাজনৈতিকভাবে বিকশিত হয়। এই আন্দোলন বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনাপর্ব

বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনাপর্ব শুরু হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধে ইংরেজরা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই বাংলায় ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়।

পলাশীর যুদ্ধের আগে বাংলায় ইংরেজদের বাণিজ্যিক স্বার্থ ছিল। তারা বাংলা থেকে সুতা, কাঁচামাল ও মসলা আমদানি করত এবং ইংল্যান্ডে রপ্তানি করত। তবে, ইংরেজরা বাংলার রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে আগ্রহী ছিল না।

১৭৫৭ সালে ইংরেজরা বাংলায় একটি সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজরা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীকে পরাজিত করে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে। এই যুদ্ধের ফলে বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।

পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা বাংলার শাসন ব্যবস্থাকে তাদের অনুকূলে করে তোলে। তারা বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে এবং বাংলার সম্পদকে তাদের দেশে নিয়ে যায়। এছাড়াও, তারা বাংলায় বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান প্রবর্তন করে।

পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় ব্রিটিশ শাসন একটি শক্ত ভিত্তি লাভ করে। তবে, বাংলার মানুষ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই প্রতিরোধ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রূপ নিয়ে সংঘটিত হয়।

বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনাপর্বের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো:

  • ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ
  • ১৭৬৫ সালে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা
  • ১৭৭৩ সালে কোম্পানি শাসন সংস্কারের জন্য ওয়ারেনের হেস্টিংসের নিয়োগ
  • ১৭৮৬ সালে দ্বিতীয় ওয়ারেনের হেস্টিংসের অপসারণ

বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনাপর্ব বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা হয় এবং বাংলার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

আফগান শাসন ও বারভূঁইয়া (১৫৩৮ খ্রি: – ১৫৭৬ খ্রিঃ)

১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে শেরশাহের মৃত্যুর পর বাংলায় আফগান শাসন শুরু হয়। শেরশাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইসলাম শাহ সিংহাসনে বসেন। ইসলাম শাহ ছিলেন একজন দুর্বল শাসক। তার শাসনকালে বাংলায় বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়।

ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র গিয়াসউদ্দিন শাহ সিংহাসনে বসেন। গিয়াসউদ্দিন শাহ ছিলেন একজন সাহসী ও দক্ষ শাসক। তিনি বাংলায় শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলার রাজধানীকে গৌড় থেকে রাজমহলে স্থানান্তরিত করেন।

গিয়াসউদ্দিন শাহের মৃত্যুর পর ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র সুলতান মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন। সুলতান মুহাম্মদ শাহ ছিলেন একজন দুর্বল শাসক। তার শাসনকালে বাংলায় আবার বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়।

বারভূঁইয়া (১৫৫৩-১৫৭৬ খ্রি.)

সুলতান মুহাম্মদ শাহের দুর্বল শাসনকালে বাংলায় বারভূঁইয়াদের উত্থান ঘটে। বারভূঁইয়ারা ছিলেন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিদার। তারা সুলতান মুহাম্মদ শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

বারভূঁইয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন:

  • শাহবাজ খান কররানী
  • মুহম্মদ খান খানজাহান
  • ঈসা খান
  • বাহাদুর খান
  • হাজিগঞ্জের খান

বারভূঁইয়াদের মধ্যে শাহবাজ খান কররানী ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি বাংলার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেন। তিনি নিজেকে বাংলার সুলতান ঘোষণা করেন।

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলায় অভিযান চালান। আকবরের কাছে বারভূঁইয়ারা পরাজিত হন। এর ফলে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

আফগান শাসন ও বারভূঁইয়াদের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে, এই সময় বাংলার অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে কিছু উন্নতি ঘটে।

আফগান শাসন ও বারভূঁইয়াদের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো:

  • ১৫৩৮ খ্রিস্টাবাদ: শেরশাহের মৃত্যুর পর বাংলায় আফগান শাসন শুরু।
  • ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ: গিয়াসউদ্দিন শাহ সিংহাসনে আরোহণ।
  • ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দ: সুলতান মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে আরোহণ।
  • ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দ: বারভূঁইয়াদের উত্থান।
  • ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ: শাহবাজ খান কররানী বাংলার অধিকাংশ অঞ্চল দখল।
  • ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ: মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযান।
  • ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ: বারভূঁইয়াদের পরাজয়।
  • ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ: বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত।

বাংলায় স্বাধীন সুলতানী শাসনের ইতিহাস

বাংলায় স্বাধীন সুলতানী শাসন শুরু হয় ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে। এটি স্থায়ী ছিল ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বাংলায় মোট ৩৬ জন সুলতান শাসন করেন।

স্বাধীন সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠার কারণ:

  • দিল্লির তুঘলক সুলতানদের দুর্বলতা।
  • বাংলার তুঘলক সুলতানের শাসনকর্তা ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের বিদ্রোহ।
  • বাংলার মুসলিম জনগণের স্বাধীনতা চেতনা।

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালের উল্লেখযোগ্য সুলতানগণ:

  • ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রি.)
  • ইজউদ্দিন আহমদ শাহ (১৩৪৯-১৩৫২ খ্রি.)
  • শামসুদ্দিন ইয়াহিয়া শাহ (১৩৫২-১৩৮৯ খ্রি.)
  • গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ (১৩৮৯-১৪১০ খ্রি.)
  • শামসুদ্দিন হোসেন শাহ (১৪১০-১৪৩১ খ্রি.)
  • বখতিয়ার শাহ (১৪৩১-১৪৫৯ খ্রি.)
  • মুহাম্মদ শাহ (১৪৫৯-১৪৬৯ খ্রি.)
  • সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৬৯-১৫১৯ খ্রি.)
  • আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৫১৯-১৫৩৩ খ্রি.)

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

  • বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা।
  • বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ।
  • বাংলায় স্থাপত্য ও শিল্পের উন্নতি।
  • বাংলার অর্থনীতির উন্নতি।
  • বাংলায় বাণিজ্যের প্রসার।

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলার সংস্কৃতি:

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলার সংস্কৃতিতে মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই সময় বাংলায় কবিতা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, স্থাপত্য ও শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলার স্থাপত্য:

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলায় স্থাপত্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। এই সময় বাংলায় নির্মিত উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সোনারগাঁওয়ের ষাট গম্বুজ মসজিদ
  • সোনারগাঁওয়ের খান জাহান আলীর মসজিদ
  • ঢাকার শায়েস্তা খানের মসজিদ
  • ঢাকার লালবাগ কেল্লা
  • রাজমহলের খান জাহানীর মসজিদ

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলার শিল্প:

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলার শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। এই সময় বাংলায় নির্মিত উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সোনারগাঁওয়ের পোড়ামাটির ফলক
  • সোনারগাঁওয়ের পোড়ামাটির মূর্তি
  • ঢাকার লালবাগ কেল্লার টেরাকোটা

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালের সমাপ্তি:

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযানের ফলে বাংলায় স্বাধীন সুলতানী শাসন সমাপ্ত হয়।

মধ্যযুগের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস

মধ্যযুগের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • বখতিয়ার খলজির বিজয় (১২০৪ খ্রি.) থেকে স্বাধীন সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠা (১৩৩৮ খ্রি.) পর্যন্ত।
  • স্বাধীন সুলতানী শাসন (১৩৩৮ খ্রি. থেকে ১৫৭৬ খ্রি.)।
  • মুঘল শাসন (১৫৭৬ খ্রি. থেকে ১৭৫৭ খ্রি.)।

বখতিয়ার খলজির বিজয়

১২০৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির মামলুক সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবেকের সেনাপতি বখতিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণ করেন। তিনি সেনপতি গৌড়ের রাজা লক্ষণসেনকে পরাজিত করেন এবং বাংলা জয় করেন। বখতিয়ার খলজি বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন।

স্বাধীন সুলতানী শাসন

১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার তুঘলক সুলতানদের শাসনকর্তা ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের বিদ্রোহের ফলে বাংলায় স্বাধীন সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় বাংলায় মোট ৩৬ জন সুলতান শাসন করেন।

স্বাধীন সুলতানী শাসনকালে বাংলায় মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটে। এই সময় বাংলায় কবিতা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, স্থাপত্য ও শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। বাংলায় মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, স্থাপিত হয়। বাংলার অর্থনীতি ও বাণিজ্যেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।

মুঘল শাসন

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযানের ফলে বাংলায় স্বাধীন সুলতানী শাসন সমাপ্ত হয়। এরপর বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হিসেবে পরিণত হয়।

মুঘল শাসনকালে বাংলায় প্রশাসন, শিক্ষা, বাণিজ্য, শিল্প ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। বাংলায় মুঘল আমলে নির্মিত উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ঢাকার লালবাগ কেল্লা
  • রাজমহলের খান জাহানীর মসজিদ
  • ঢাকার শায়েস্তা খানের মসজিদ
  • সোনারগাঁওয়ের ষাট গম্বুজ মসজিদ

মধ্যযুগের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বখতিয়ার খলজির বিজয়, স্বাধীন সুলতানী শাসন ও মুঘল শাসন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সময় বাংলায় মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটে এবং বাংলার অর্থনীতি ও বাণিজ্যেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ছিলেন একজন তুর্কি-আফগান সেনাপতি এবং প্রাথমিক দিল্লি সালতানাতের সেনাপতি। তিনি ১২০৫ সালে বাংলা এবং বিহার জয় করেন এবং এভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন।

ইখতিয়ার উদ্দিন খলজি ১১৫০ সালে আফগানিস্তানের গরমশিরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খলজি উপজাতির একজন সদস্য। তার বাল্যজীবন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে মনে করা হয় দারিদ্রের পীড়নে তিনি স্বদেশ ত্যাগ করেন এবং নিজের কর্মশক্তির উপর নির্ভর করে অন্যান্য অধিবাসীদের ন্যায় ভাগ্যান্বেষণে বের হন।

খলজি ঘুরির সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি তার বীরত্ব এবং দক্ষতার জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই উচ্চ পদে উন্নীত হন। ১২০৩ সালে তিনি ঘুরির সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন।

১২০৫ সালে খলজি বাংলা অভিযান শুরু করেন। তিনি নদীয়া দখল করেন এবং দ্রুত অগ্রসর হয়ে লক্ষ্মণাবতী (বর্তমান লখনৌতি) দখল করেন। লক্ষ্মণাবতীর শাসক লক্ষ্মণ সেন খলজির কাছে পরাজিত হন এবং পালিয়ে যান। খলজি লক্ষ্মণাবতীকে তার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন।

খলজির বাংলা বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিজয়ের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। খলজি বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সময়কালে বাংলায় অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ইসলামী প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়।

খলজি ১২০৬ সালে দেবকোটে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র গিয়াসউদ্দিন বলবান বাংলার শাসক হন।

ইখতিয়ার উদ্দিন খলজি ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি এবং শাসক। তার বাংলা বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার বিজয়ের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা হয় এবং বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে।

খলজির অবদানের মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলা এবং বিহার জয় করে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা
  • বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
  • বাংলায় অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ইসলামী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ

খলজিকে বাংলার ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার বিজয়ের ফলে বাংলায় একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *