ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি- ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা যা আমাদের অনেকেরই হয়। এর কারণ হতে পারে খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন ইত্যাদি। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বুক জ্বালাপোড়া, ঢেকুর ওঠা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিচের ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  • খাদ্য পরিবর্তন করুন: গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন, ভাজাপোড়া, মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, কফি, চা ইত্যাদি। এছাড়াও, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা এবং খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: পানি পান করলে পেটের গ্যাসের সমস্যা কমে যায়। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • হজমের সমস্যা দূর করুন: গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার অন্যতম কারণ হল হজমের সমস্যা। তাই হজমশক্তি বাড়াতে দই, লেবু, পুদিনা, আদা ইত্যাদি খাবার খান।
  • স্ট্রেস কমাতে চেষ্টা করুন: মানসিক চাপও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, শরীরচর্চা ইত্যাদি করুন।

নির্দিষ্ট কিছু ঘরোয়া উপায়:

  • আদা: আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আদা কুচি করে চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা আদা চা খেতে পারেন।
  • পুদিনা: পুদিনাপাতায় থাকা মেন্টল অ্যাসিড পেটের গ্যাস ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পুদিনাপাতার রস খেতে পারেন অথবা পুদিনাপাতা চা খেতে পারেন।
  • লেবু: লেবুতে থাকা ভিটামিন সি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • মধু: মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পেটের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। মধু হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • দুধ: দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে ঠান্ডা দুধ পান করতে পারেন।

উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সমস্যা তীব্র হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গ্যাস্ট্রিক কি?

গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারণ সমস্যা যা পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, বুক জ্বালাপোড়া, ঢেকুর ওঠা ইত্যাদি উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত। গ্যাস্ট্রিকের অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন ইত্যাদি অন্যতম।

গ্যাস্ট্রিকের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • খাদ্যাভ্যাসগত কারণ: অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, কফি, চা ইত্যাদি খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
  • হজমজনিত সমস্যা: ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) ইত্যাদি হজমজনিত সমস্যার কারণে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
  • অন্যান্য কারণ: কিছু ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, অ্যাসপিরিন, ইত্যাদি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপের কারণেও গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • পেটে ব্যথা: পেটের উপরের অংশে, বিশেষ করে বুকের কাছে ব্যথা হয়।
  • বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব হয়, কখনও কখনও বমি হয়।
  • বুক জ্বালাপোড়া: বুকের পিছনে জ্বালাপোড়া হয়।
  • ঢেকুর ওঠা: ঢেকুর ওঠে।
  • অরুচি: খাবারের প্রতি অরুচি হয়।
  • ওজন হ্রাস: ওজন হ্রাস হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন হয়। ওষুধের পাশাপাশি, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা, খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, মানসিক চাপ কমানো ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যাসিড নিয়ন্ত্রক ওষুধ: এই ওষুধগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI): এই ওষুধগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা খুব বেশি কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক: গ্যাস্ট্রিকের কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে:

  • নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করুন। অতিরিক্ত ক্ষুধা পেলে পাকস্থলীতে বেশি পরিমাণে অ্যাসিড নিঃসরণ হয়, যা গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে।
  • হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, এবং অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।
  • পুষ্টিকর খাবার খান। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, এবং আঁশযুক্ত খাবার খান।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানি পান করলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ।

বিছানাতেই বাজিমাৎ?

বিছানাতেই বাজিমাৎ বলতে বুঝায় এমন একটি অবস্থান বা পরিস্থিতি যেখানে একজন ব্যক্তি বিছানায় অবস্থান করেই কিছু অর্জন করে। এই অর্জনটি হতে পারে শারীরিক, মানসিক, বা আর্থিক।

শারীরিক ক্ষেত্রে, বিছানাতেই বাজিমাৎ বলতে বুঝায় এমন একটি অবস্থান যেখানে একজন ব্যক্তি বিছানায় অবস্থান করেই শারীরিক কোনও কাজ সম্পাদন করে। যেমন, একজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে থেকেই যোগব্যায়াম করতে পারে, ব্যায়াম করতে পারে, বা কোনও খেলাধুলা করতে পারে।

মানসিক ক্ষেত্রে, বিছানাতেই বাজিমাৎ বলতে বুঝায় এমন একটি অবস্থান যেখানে একজন ব্যক্তি বিছানায় অবস্থান করেই কোনও মানসিক কাজ সম্পাদন করে। যেমন, একজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে থেকেই বই পড়তে পারে, লেখালেখি করতে পারে, বা কোনও গবেষণা করতে পারে।

আর্থিক ক্ষেত্রে, বিছানাতেই বাজিমাৎ বলতে বুঝায় এমন একটি অবস্থান যেখানে একজন ব্যক্তি বিছানায় অবস্থান করেই কোনও আর্থিক কাজ সম্পাদন করে। যেমন, একজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারে, বিনিয়োগ করতে পারে, বা কোনও ব্যবসা করতে পারে।

বিছানাতেই বাজিমাৎ একটি ইতিবাচক ধারণা। এটি আমাদেরকে বোঝায় যে কোনও কিছু অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বিছানা থেকে উঠতে হবে না। আমরা বিছানায় অবস্থান করেই অনেক কিছু অর্জন করতে পারি।

বাংলাদেশে, বিছানাতেই বাজিমাৎ ধারণাটি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ হল, আমাদের দেশে এখন অনেক মানুষই ব্যস্ত জীবনযাপন করেন। তারা সারাদিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাদের কাছে বিছানায় অবস্থান করেই কিছু অর্জন করার ধারণাটি বেশ আকর্ষণীয়।

বিছানাতেই বাজিমাৎ ধারণাটি আমাদেরকে অনেক কিছু শেখাতে পারে। এটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতেই পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করতে পারি।

সব খাবারে সকলের গ্যাস হয় না

সব খাবারে সকলের গ্যাস হয় না। গ্যাস হওয়ার কারণ হল হজম না হওয়া খাবার। যখন আমরা খাবার খাই, তখন আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্যনালী থেকে খাবার আসে। পাকস্থলীতে খাবার হজম হয়।

হজমের সময় খাবারের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজ, প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাট ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারল এ পরিণত হয়। এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

যখন খাদ্যনালী থেকে খাবার পাকস্থলীতে আসে, তখন পাকস্থলীর মধ্যে থাকা এনজাইমগুলো খাবারকে ভেঙে ফেলতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াতে কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন, মিথেন এবং নাইট্রোজেন গ্যাস তৈরি হয়।

এই গ্যাসগুলো পাকস্থলীতে জমে থাকে। খাবার যখন পাকস্থলী থেকে ছোটান্তন্ত্রে প্রবেশ করে, তখন এই গ্যাসগুলো ছোটান্তন্ত্র থেকে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়।

যদি কোনও কারণে খাদ্যনালী থেকে খাবার পাকস্থলীতে সঠিকভাবে না আসে, তাহলে খাবার পুরোপুরি হজম হয় না। ফলে খাদ্যনালীতে গ্যাস জমে থাকে। এছাড়াও, যদি কোনও কারণে পাকস্থলীতে খাবার হজম না হয়, তাহলেও গ্যাস জমে থাকে।

গ্যাস হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • খাদ্যাভ্যাসগত কারণ: কিছু খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে। যেমন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, ডাল, বাদাম, বিনস, লাল আটা, গম ইত্যাদি খাবারগুলো হজম করতে বেশি সময় লাগে। ফলে এগুলো খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • হজমজনিত সমস্যা: হজমজনিত সমস্যার কারণেও গ্যাস হতে পারে। যেমন, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) ইত্যাদি রোগের কারণে গ্যাস হতে পারে।
  • অন্যান্য কারণ: কিছু ওষুধ, অ্যালকোহল, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদির কারণেও গ্যাস হতে পারে।

একটি নির্দিষ্ট খাবারে কারও গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, আবার অন্য কারও নাও থাকতে পারে। এর কারণ হল, প্রতিটি মানুষের শরীরের হজমশক্তি আলাদা। কারও হজমশক্তি বেশি হলে সেসব খাবার তার হজম হয়ে যেতে পারে, আবার কারও হজমশক্তি কম হলে সেসব খাবার তার হজম না হয়ে গ্যাস হতে পারে।

তাই, কোন খাবারে কারও গ্যাস হয় কিনা তা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে, সাধারণত যেসব খাবারে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেগুলো হল:

  • ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, ডাল, বাদাম, বিনস, লাল আটা, গম
  • দুধ, দই, আইসক্রিম
  • মসলাদার খাবার
  • চর্বিযুক্ত খাবার
  • অ্যালকোহল
  • কফি, চা

যদি কারও গ্যাসের সমস্যা হয়, তাহলে সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা, খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, মানসিক চাপ কমানো ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *