বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কার্যাবলী আলোচনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্বের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করে। এটি জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা এবং এর লক্ষ্য হল “সকল বয়সের সকল মানুষের স্বাস্থ্য স্তরের সর্বোচ্চ অর্জন”।

WHO-এর কার্যাবলীগুলিকে নিম্নলিখিত প্রধান বিভাগগুলিতে বিভক্ত করা যেতে পারে:

  • স্বাস্থ্য নীতি ও পরিকল্পনা: WHO বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে। এটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মান উন্নত করতে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
  • স্বাস্থ্য তথ্য ও গবেষণা: WHO বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশ করে। এটি স্বাস্থ্য গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করে এবং স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসার ও ব্যবহারকে সহায়তা করে।
  • স্বাস্থ্য সেবা: WHO বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য কাজ করে। এটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের মান উন্নতকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অ্যাক্সেস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • স্বাস্থ্য প্রচার ও জনসচেতনতা: WHO স্বাস্থ্য প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এটি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রচার এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য: WHO আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য কাজ করে। এটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্য ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে।

WHO-এর কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে:

  • পোলিও টিকার আবিষ্কার: WHO-এর সহায়তায় পোলিও টিকা আবিষ্কৃত হয় এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী পোলিওর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
  • মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস: WHO-এর সহায়তায় মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
  • এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: WHO-এর সহায়তায় এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

WHO বিশ্বের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে, স্বাস্থ্য তথ্য ও গবেষণা পরিচালনা করে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মান উন্নত করে, স্বাস্থ্য প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কাজ করে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (United Nations Development Programme) বা ইউএনডিপি (UNDP) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি সহায়ক সংস্থা। ১৯৬৫ সালের ২২শে নভেম্বর এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। উন্নয়নশীল দেশ সমূহে সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহার এবং সম্পদ আহরণে সাহায্য করা এই সংস্থার উদ্দেশ্য।

ইউএনডিপির মূল লক্ষ্য হল:

  • দারিদ্র্য হ্রাস
  • ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা
  • নারীর ক্ষমতায়ন
  • পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন

ইউএনডিপি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এই কার্যক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান
  • গবেষণা ও উন্নয়ন
  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
  • উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ উন্নয়ন
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
  • মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা

ইউএনডিপির কার্যক্রম বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশে পরিচালিত হয়। এই সংস্থার বার্ষিক বাজেট প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশে ইউএনডিপির কার্যক্রম ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়। এই সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইউএনডিপির সহায়তায় বাংলাদেশে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:

  • গ্রামীণ উন্নয়নে সহায়তা
  • নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা
  • পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে সহায়তা
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উন্নতিতে সহায়তা
  • মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় সহায়তা

ইউএনডিপির কার্যক্রম বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাস, ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (United Nations Children’s Fund) বা ইউনিসেফ (UNICEF) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য কাজ করে। এটি জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা এবং এর লক্ষ্য হল “সব শিশুর জন্য একটি সুরক্ষিত, সুস্থ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা”।

ইউনিসেফ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে ইউনিসেফ বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে কাজ করে।

ইউনিসেফ তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এই কার্যক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • শিশু স্বাস্থ্য: ইউনিসেফ শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সহায়তা করে। এটি টিকাদান কর্মসূচি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
  • শিশু শিক্ষা: ইউনিসেফ শিশুদের শিক্ষার সুযোগ প্রদানে সহায়তা করে। এটি প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, এবং বিশেষ শিক্ষার সুযোগ উন্নতিতে কাজ করে।
  • শিশু সুরক্ষা: ইউনিসেফ শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করে। এটি শিশু অধিকার রক্ষা, শিশু নির্যাতন ও অবহেলা প্রতিরোধ, এবং শিশুশ্রম দূরীকরণে কাজ করে।
  • শিশু বিকাশ: ইউনিসেফ শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক বিকাশে কাজ করে।

ইউনিসেফের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে:

  • শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস: ইউনিসেফের সহায়তায় শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
  • মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস: ইউনিসেফের সহায়তায় মাতৃ মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
  • প্রাথমিক শিক্ষার হার বৃদ্ধি: ইউনিসেফের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • শিশু অধিকার রক্ষা: ইউনিসেফের সহায়তায় শিশু অধিকার রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

ইউনিসেফ বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এই সংস্থার কার্যক্রম বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনকে রক্ষা ও উন্নত করেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *